মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারে ফসল উৎপাদন দ্বিগুন বেড়েছে

প্রকাশিত: ৩:০৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : মালচিং মূলত চীন ও জাপান দেশের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। বর্তমানে বাংলাদেশেও কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে এই পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ শুরু হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে দাগনভূঞা উপজেলায় ও মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন রকমের সবজি। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজির ফলন ও দাম ভাল পাওয়ায় উৎসাহিত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষক ও উদ্যেক্তারা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আদিম পদ্ধতি ছেড়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সারাদেশের মতো দাগনভূঞা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি বিভাগের কার্যক্রম দেখা গেছে। বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে চাষাবাদ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ফসল চাষাবাদে প্রযুক্তিগত কৌশল ব্যবহারে কৃষি ফসলের চাষ করছেন চাষিরা। পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তির মধ্যে একটি হলো এই মালচিং পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে প্রথমেই পরিমাণ মতো খাবার দিয়ে জমি প্রস্তুত শেষে সারি তৈরি করা হয়। সেই মাটির সারিগুলি পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। এরপর সারিগুলো দিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে পলিথিন ফুটো করে সবজির চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের পর থেকে শুধু দেখভাল করা ছাড়া আর তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয় না। মাটির সারিগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে থাকার কারণে বাইর থেকে কোন ছত্রাক কিংবা রোগবালাই সেই সবজির চারাতে আক্রমণ করতে পারে না বলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় খুবই কম। ক্ষেতের পরিচর্যার জন্য তেমন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না বলে ফসল উৎপাদনে লাভজনক হওয়া যায় । এছাড়া এই পদ্ধতিতে ফলন হয় দ্বিগুণ। পরিশ্রম করতে হয় কম। আর এই পদ্ধতি অনেক সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় অনেক কৃষক ও উদ্যোক্তা এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষে কৃষকরা সফল হচ্ছেন। কীটনাশকের ও সারের সাশ্রয় হওয়ার কারণে লাভের পরিমাণে বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ কমিয়ে লাভবান হচ্ছেন। বাজারে মালচিং পদ্ধতিতে চাষকৃত সবজির চাহিদা ও দাম সারাবছরই বেশি থাকে বলে জানান কৃষকরা।

তরুন উদ্যোক্তা রেজাউল হক বলেন, তিনি প্রথমে ফেসবুক একটা গ্রুপে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেখেন এবং পরে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে ও সহযোগিতায় নিজেই পাইলট প্রেগ্রাম হিসেবে বিভিন্ন সবজি চাষ করেছেন। এই পদ্ধতিতে তিনি সবজি চাষ করে অভাবনীয় ফলন পেয়েছেন। চলতি মৌসুমে টমোটে, শসা, ক্যাপসিকাম, গাজর, তরমুজ, বেগুন, বরবটি, লেটুস, করলা, ফুলকপি, ইত্যাদি সবজি মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করেন। বিষমুক্ত সবজি চাষের জন্য এটি উত্তম পদ্ধতি। কারণ এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে ক্ষেতে তেমন রোগবালাইয়ের আক্রমণ হয় না বলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় খুবই কম। বিগত বছরে চারজন তরুন উদ্যোক্তা প্রায় ২ একর জমিতে নানাবিধ বহুমুখী চাষাবাদে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রাসায়নিকমুক্ত তাজা শাক-সবজি বাজারজাতকরণের একমাত্র উদ্দেশ্য। তিনি আরো জানান আমাদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌছানোর লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে ব্যতিক্রম উদ্দ্যেগে আমরা কাজ করছি। তরুণ ও শিক্ষিত বেকার যুবকগণ উন্নয়নমুখী কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হলে কৃষি সম্প্রাসারণ আরো ত্বরান্বিত হবে।

দাগনভুঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মহি উদ্দিন মজুমদার বলেন, গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে বের হয়ে পরিবেশবান্ধব ও সহজলভ্য পদ্ধতিতে সবজি চাষ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যেই মালচিং পদ্ধতি আমাদের দেশে আনা হয়েছে। মালচিং অত্যন্ত সহজলভ্য, লাভজনক ও বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি অন্যতম পদ্ধতি। এটি মূলত বিদেশী একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ করলে লাভ হবে অনেক বেশি। ইতোমধ্যেই রেজাইল হকের বিশাল পরিসর জায়গায় মালচিং পদ্ধতি ব্যবহারে স্থানীয় অনেক কৃষক আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এই পদ্ধতিতে সবজি চাষে আগ্রহী কৃষকদের আমরা সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করব। সরকারের ভিশন বিষমুক্ত সবজি চাষকে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষনিক কাজ করে যাচ্ছে। দাগনভূঞা উপজেলায় বিভিন্ন মৌসুমে ব্যাপক চাষাবাদে সাফল্য আসছে।