হারাতে বসেছে কোচ সম্পদায়ের ঐতিহ্যবাহি পোষাক রাঙ্গা লেফেন

প্রকাশিত: ১১:৫৫ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা পোড়াগাঁও ইউনিয়নের আন্ধারুপাড়া মৌজার খলচান্দা গ্রামের বাস করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী কোচ সম্প্রদায়ের ৫৫টি পরিবারের প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। তারা বাংলাদেশ জন্ম হওয়ার আগে থেকেই ওই গ্রামে বসবাস করেন। এরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোচ সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ায় এদের পোষাকে রয়েছে ভিন্নতা। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে এ সম্প্রদায়ের পুরুষরা পড়েন ধুতি। আর নারীরা পড়েন রাঙ্গা লেফেন। নারীরা এই রাঙ্গা লেফেন নিজেদের হস্তশিল্পের তাঁত বা যন্ত্র দিয়ে নিজ হাতেই তৈরি করে থাকেন।

উপজেলার খলচান্দা গ্রামের কোচরা জানান, রাঙ্গা লেফেন বানাতে যে সুতার প্রয়োজন হয় তার দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার কারনে এখন খুব বেশি রাঙ্গা লেফেন বানান না। আগে প্রায় প্রতি ঘরের নারীরা তাদের তৈরি রাঙ্গা লেফেন পরতেন। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে রাঙ্গা লেফেন না বানানোয় অনেকেই এটি বানানো ভুলে গেছেন। তাই হারিয়ে যেতে বসেছে কোচদের ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গা লেফেন।

হঠাৎ দুই একটি পরিবারের নারীরা অনেকটা শখের বসে মাঝে মধ্যে নিজেদের যন্ত্র দিয়ে রাঙ্গা লেফেন বানিয়ে থাকেন। বিশেষ করে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কিংবা নিজস্ব সাষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিধান করার জন্য।
ওই গ্রামের শ্রী রমেশ কোচের বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলে রাঙ্গা লেফেন তৈরির তাঁও বা যন্ত্র। তার স্ত্রী শ্রী সীতা রাণী কোচনী নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় বসে রাঙ্গা লেফেন তৈরি করছেন।

সীতা রাণী জানান, রাঙ্গা লেফেন তৈরির নিজস্ব তাঁত বা যন্ত্র থাকলেও সুতার দাম বৃদ্ধির কারনে লেফেন তৈরি করেন না। ৫ হাত লম্বা একটি রাঙ্গা লেফেন বানাতে প্রায় ৭৫০ গ্রাম সুতার প্রয়োজন হয়। প্রতি কেজি সুতার দাম এখন ৬০০ টাকা। প্রতিটি লেফেন বানাতে সুতা বাবদ খরচ হয় ৪৫০ টাকা। তৈরি করতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় দিন। এর বর্তমান বাজার দাম রয়েছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। শ্রমের মজুরীতে না পুষালেও নিজের নাতনীর সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে পরিধানের জন্য সীতা নিজ হাতেই তিনি তৈরি করছেন রাঙ্গা লেফেন।
সীতা রাণী আরো জানান, রাঙ্গা লেফেন এর তাঁত যন্ত্রে জন্য প্রয়োজন হয় কাঁঠ বা বাঁশের তৈরি কয়েকটি যন্ত্রাংশ। ক্ষুদ্র এ যন্ত্রাংশগুলোর নাম হলো- গাড়ী, রাজ, দোহী, মাখু, বড়াই, ঠোঙ্গা, কন্ঠাছান্দা, থেরথেবা, নাটাই, খুঁটি ও চরকী।

এর প্রধান কাঁচামাল হলো সুতা। সব মিলিয়ে কোচদের নিজস্ব তাঁতযন্ত্র বানাতে খরচ পড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। তিনি আরো জানান, তার পুর্ব পুরুষদের কাছ থেকে এই নিখুঁত ও সুন্দর রাঙ্গা লেফেন বানানো শিখেছেন। তবে তিনি বলেন বর্তমান যুগের নারীর অনেকেই রাঙ্গা লেফেন বানাতে পারেন না। আবার অনেকেই ভুলে যাচ্ছেন। সুতার পর্যাপ্ত সরবরাহ ও দাম থাকলে অনেক পরিবারই নিজেরাই এই ঐতিহ্যের পোষাক তৈরি করত।

ওই গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমতি মায়াদেবী কোচনী বলেন, আমাদের পোষাকের ঐতিহ্য রক্ষায় তাঁত শিল্পে স্থানীয় একটি বেসরকারী সংস্থা প্রশিক্ষণ দিলেও এখন আর খবর নেয় না। তিনি কোচদের এই ঐতিহ্যের পোষাক রক্ষার দাবী জানান।

এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোচ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যের পোষাক রাঙ্গা লেফেন তৈরি শিল্পে সরকারীভাবে সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্ধ নেই। তবে তিনি বলেন, কোচ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য ও সংষ্কৃতি রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।