খুলনাস্থ যমুনা অয়েল কোম্পানীর শ্রমিক- কর্মচারীদের মজুরি নিয়ে চলছে অসন্তোষ

প্রকাশিত: ৬:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২০

আতিয়ার রহমান,খুলনা : খুলনা নগরীর খালিশপুরস্থ যমুনা অয়েল কোম্পানীর দৌলতপুর ডিপোতে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি নিয়ে চলছে অসন্তেষ। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিরে সাথে কোন ভাবে তাল মেলাতে পারছে না শ্রমিক-কর্মচারীরা। অথচ পাশ্ববর্তী পদ্মা ও মেঘনা অয়েল কোম্পানীর ডিপোগুলোতে তুলনামূলক মজুরি বেশি দেওয়া হচ্ছে। এদিকে যমুনা অয়েল কোম্পানীর দৌলতপুর ডিপোতে শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চলছে চাপা উত্তেজনা। অসৎ উপায় অবলম্বন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো মজুরির পরিমাণ বিগত দিনের তুলনায় কমিয়ে কাজ বাগিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

বিষয়টি জানতে পেরে শ্রমিক-কর্মচারীরা সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নিকট লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে বে-আইনীভাবে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারীদের বর্তমান মজুরির তুলনায় কম দরে টেন্ডার দিয়ে কাজ পাইয়ে দিতে দূর্নীতিবাজ মহলের তদবীরের কারণে অসন্তেষ প্রকাশসহ ঠিকাদার নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবি করেছেন।

জানা যায়, যমুনা অয়েল কোম্পানীর দৌলতপুর ডিপোতে ঠিকাদারের মাধ্যমে দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে সাধারণ শ্রমিকদের ১৪৩টাকা, আধা দক্ষ শ্রমিকদের ১৬০টাকা, দক্ষ শ্রমিকদের ১৭৬ টাকা এবং কর্মচারীদের ১৮৪ টাকা দেওয়া হচ্ছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর একটি মহল কাজ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য সাধারণ শ্রমিকদের ১৭০.১৫ টাকা, আধা দক্ষ শ্রমিকদের ৭৯.৬৮ টাকা, দক্ষ শ্রমিকদের ১৩২.৭২ টাকা এবং কর্মচারীদের ৫০.৬৩টাকা সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে দরপত্র আহবান করেন। যা বর্তমান বাজারমূল্যের তুলনায় সামঞ্জস্য নয়। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতার কারণে দৌলতপুর ডিপোতে কর্মরত প্রায় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীসহ তাদের পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি, বর্তমান বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নূন্যতম সাধারণ শ্রমিকদের ২৪৫-২৫০ টাকা, আধা দক্ষ শ্রমিকদের ২৬০-২৭০ টাকা, দক্ষ শ্রমিকদের ২৫৫-২৬৫ টাকা এবং কর্মচারীদের ২৮০-২৯০ টাকা দেওয়া প্রয়োজন।

এদিকে দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারি ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়ার জন্য যমুনা অয়েল কোম্পানীর চট্রগ্রামের প্রধান কার্যালয় থেকে ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর টেন্ডার আহবান করে। মেসার্স লোকমান এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স রহমান এন্ড সন্স, মেসার্স শেখ রুহুল আমিন, জামান এন্ড ব্রাদার্স, টেকবে ইন্টারন্যাশনাল, আরব সিকিউরিটি, শাজাহান এন্ড সন্স, শাকিল এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি ঠিকাদার এতে অংশ নেই। যাচাই বাছাইতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্রে ক্রটি থাকার কারণে পুনরায় ২০১৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর টেন্ডারের আহবান করেন কর্তৃপক্ষ।

এবারও কাগজপত্রে ক্রুটি থাকার কারণে পুনরায় ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৃতীয় দফায় টেন্ডার আহবান করা হয়। কিন্তু যাচাই-বাছাই সম্পূর্ণ না হওয়ায় পূর্বের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে এখনও শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে। তবে কয়েকদফা টেন্ডার যাচাই-বাছাইয়ে সমাধান না হওয়ায় অসৎ উপায়ে ঠিকাদার বর্তমান বাজার মূল্যের কম মূল্যে মজুরি রেট নেওয়ার জন্য তদবির করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের খুলনাস্থ দৌলতপুর ডিপোর শ্রমিক মো: সোহাগ শিকদার জানান, বর্তমানে ডিপোতে যে সকল শ্রমিক ও কর্মচারী কাজ করে তারা সবাই ঠিকাদারের মাধ্যমে মজুরি পায়। কিন্তু বর্তমানের বাজারের যে ঊর্ধ্বগতি তাতে করে এই সামান্য মজুরিতে শ্রমিকদের দিন চালানো কষ্টকর। এই বিষয়ে ডিপোতে অসন্তষ চলছে। তাই তাদের দাবি বর্তমান বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই শ্রমিক ও কর্মচারীদের মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।

যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: গিয়াস উদ্দিন আনচারী বলেন, দৌলতপুর ডিপোর ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। এখনও আমার কাছে কোন রিপোর্ট আসেনি। এমনকি এর ইভেলুয়েশনও হয়নি। তিনি আরও বলেন, পদ্মা ও মেঘনায় মজুরির রেটের সাথে খুব বেশি সামঞ্জস্য হবে না। একটি কমিটি আছে যারা টেন্ডারের কাজগুলো ইভেলুয়েশন করবে। কমিটির সব কাজ শেষ হওয়ার পর ফাইনাল হয়ে আমার কাছে রিপোর্ট আসবে। এরপরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।