মেয়ের জিম্মায় রহিমা

প্রকাশিত: ৫:১৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : খুলনায় নিখোঁজ থাকা রহিমা বেগমকে তার মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় মুক্তি দিয়েছেন আদালত। রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারক আল আমিনের কাছে জবানবন্দি শেষে তাকে বের করা হয়।

এ সময় বাদীপক্ষের আইনজীবী আফরুজ্জামান টুটুল বলেন, ভিকটিম আদালতকে তার অপহরণের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।

সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, জমিজমা নিয়ে যাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল মূলত তারাই তাকে অপহরণ করে চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তিনি ফরিদপুরে আসেন। মামলায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে ৪-৫ জন রয়েছে অপহরণের সঙ্গে জড়িত।

জবানবন্দি প্রদান শেষে চিফ মেট্রোপলিটন আদালত-৪ এর বিচারক সারোয়ার আহমেদ তাকে তার মেয়ে ও মামলার বাদী আদুরী খাতুনের জিম্মায় হস্তান্তর করেন।

এদিকে উদ্ধারের পর থেকে নিশ্চুপ ছিলেন রহিমা বেগম। রোববার দুপুরে তাকে খুলনা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি অপহরণের অভিযোগ করেছেন।

শনিবার রাত ১২টার দিকে ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় রহিমা বেগমকে। খুলনার দৌলতপুর থানা পুলিশের একটি টিম দীর্ঘদিন গোয়েন্দা তৎপরতা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে। তার অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর তাকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়।

সৈয়দপুর গ্রামের জনৈক কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে ছিলেন রহিমা। কুদ্দুস মোল্লা খুলনার সোনালী জুট মিলে চাকরিরত অবস্থায় রহিমা খাতুনের মহেশ্বরপাশার বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। সেই সূত্রে তিনি সেখানে যান।

দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তিনি বলেন, একজন নারী নিখোঁজ এটা নিয়ে আমরা বিব্রত ছিলাম। তিনি কোনো ফোন ব্যবহার করতেন না। এজন্য আমরা শুধু প্রযুক্তিগত সহায়তার ওপর নির্ভর করে খোঁজ নিতে পারছিলাম না। পরে গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে তাকে নিয়ে আসি।

রহিমা বেগম নিখোঁজের পর তার মেয়ে থানায় মামলা করে। আদালত মামলাটির তদন্তভার দেয় পিবিআইকে। এরপরও আমরা এটির ছায়াতদন্ত করছিলাম। অবশেষে আমরা সফল হই। রোববার সকালে ভিকটিমকে পিবিআই দপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে।

ফরিদপুরের কুদ্দুসের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, রহিমা প্রথমে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে পরে চিটাগাং থেকে তিনি ফরিদপুরে যান।

গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। সে সময় রহিমার দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদার ওই বাড়িতে ছিলেন। পানি আনতে বাসা থেকে নিচে নেমেছিলেন রহিমা। এরপর তিনি আর ফেরত আসেননি। দীর্ঘসময় তার খোঁজ না পাওয়ায় ঘটনার দিন রাত সোয়া ২টায় দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন তার মেয়ে আদুরী।

সেই মামলায় আসামি করা হয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রধান প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া, নিখোঁজ গৃহবধূর দ্বিতীয় স্বামী বিল্লাল হাওলাদার, দৌলতপুর মহেশ্বরপশা বণিকপাড়া এলাকার মহিউদ্দিন, পলাশ ও জুয়েল এবং হেলাল শরীফকে। এর কয়েকদিন পরই তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা এখনো কারাগারে।

গ্রেফতার ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি, জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করেছিলেন রহিমা। বিষয়টি জানতেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানসহ পরিবারের সদস্যরা।

এ মামলায় আটক রফিকুল আলম পলাশ ও নুরুল আলম জুয়েলের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ বলেন, তার ছোট ছেলে রফিকুল আলম পলাশ চাকরি করে এবং বড় ছেলে নুরুল আলম জুয়েল মুদি দোকানি। দুই ছেলেই নিখোঁজ মামলায় কারাগারে। তাদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে মতবিরোধ ছিল। সে কারণে হয়রানি ও সম্মানহানি করতেই মামলা দেওয়া হয়েছে।