কুষ্টিয়ায় কারিগরি প্রশিক্ষনে স্বাবলম্বী কারাবন্দীরা

প্রকাশিত: ৪:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২০

নিউজ ডেস্কঃ কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের বন্দীদেরকে কারিগরি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে। স্বাক্ষরসহ লেখাপড়া শেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।পাশাপাশি তাঁত পল্লী, হস্তশিল্প, পাওয়ার লুম, দর্জি প্রশিক্ষণ, পুঁথির কাজ, ইলেকট্রিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সংগীত চর্চার ব্যবস্থা করা হয়েছে জেলা কারাগারে। এতে বন্দিদের মাঝে পরিবর্তন আসছে বলে জানায় কারা কর্তপক্ষ।জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে বন্দিদের আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য বর্তমান জেল সুপার মো. জাকের হোসেন নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। গত দুই বছরে কারাগারে বেশকিছু পরিবর্তন এসেছে। প্রথমদিকে এটি চ্যালেঞ্জ হলেও বর্তমানে এর সুফল পাচ্ছেন কয়েদি ও হাজতিরা।কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে কয়েকজন শিক্ষক এসে হস্তশিল্প ও পাওয়ার লুমে ওপর কয়েদিনের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। এখন কয়েদিরাই হস্তশিল্প ও পাওয়ার লুমে কাজ করেছেন।
তারা নিজেরাই শাড়ী ও লুঙ্গি উৎপাদন করছেন। উৎপাদিত এসব পণ্য কারাগারের সামনে কারা পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। উৎপাদিন পণ্য বিক্রির অর্ধেক অংশ পাচ্ছেন কয়েদিরা।

এছাড়া কয়েদীরা কারাগারে একতারা তৈরি করছেন। এই একতারা লালন একাডেমীর অনুষ্ঠানে অতিথিদের দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিদিন সকালে ইসলামী ফাউন্ডেশন ও কারাগার থেকে পৃথকভাবে কুরআন শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে বন্দিদের। বিনোদনের জন্য সাংস্কৃতিক দল গঠন করা হয়েছে। নিয়মিত সংগীত প্রশিক্ষণসহ ও পরিবেশন করেন শিল্পীরা।একই সঙ্গে কারাভ্যন্তরে গন্থাগার স্থাপন করা হয়েছে। বন্দীদের বই পড়ার সুযোগ দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।কারা কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, বন্দিদের নিরক্ষরমুক্ত করতে উদ্যেগ নিয়েছে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে। নতুন কোন আসামী এলে তার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কেউ লেখাপড়া ও স্বাক্ষর না জানলে তাকে আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়। কারাগারে আসার পরদিনই শুরু হয় স্বাক্ষর শেখানো।বর্তমান একটি মামলায় যাবজ্জীবন জেল হওয়া উচ্চশিক্ষিত একজন ব্যক্তি শিক্ষক হিসেবে এখানে কাজ করছেন। এই ব্যক্তি কারাগারে আসার পর থেকে ৯০০ জনকে স্বাক্ষরসহ লেখাপড়া শিখিয়েছেন। ২০১৭ সালে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কুষ্টিয়া কারাগারে প্রায় ৩ হাজার ২৮৮ জনকে স্বাক্ষরসহ লেখাপড়া শেখানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া জেল সুপার মো. জাকের হোসেন বলেন, স্বাক্ষরসহ লেখাপড়া শেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁত পল্লী, হস্তশিল্প, পাওয়ার লুম, দর্জি প্রশিক্ষণ, পুঁথির কাজ, ইলেকট্রিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও সংগীত চর্চার ব্যবস্থা করা হয়েছে।এখান থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অনেকেই এখন উপার্জন করে সংসার চালাচ্ছেন। এছাড়া বন্দিরা নানা ধরনের পণ্য উৎপাদন করছেন। এ পণ্য বিক্রির অর্থও তারা পাচ্ছেন।তিনি আরও বলেন, কারাগারকে সংশোধনাগার করতে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যাতে মাদক ব্যবসায়, ছিনতাই, চুরিসহ নানা অপরাধ করে আসা আসামিরা বের হয়ে সৎ কর্ম করে জীবন যাপন করতে পারেন।কুষ্টিয়া জেল সুপার মো. জাকের হোসেন বলেন, ২০০১৭সালের জুন মাস থেকে কুষ্টিয়া কারাগারে কারিগরি প্রশিক্ষন শুরু করেছি। এ পর্যন্ত ২২৮জন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বর্তমানে কারাগারে ৩০জন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এবং জেল থেকে বের হয়ে ২০জন ব্যক্তি দোকান দিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। এ ছাড়াও যারা দোকান দিতে পারেনি তারা অন্যের দোকারে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তাদের যাতে অর্থ দিয়ে পূর্ণবাসন করা যায়। সে বিষয়টি উদ্ধর্তন নজরে আনা হবে। যাতে তারা কর্মসংস্থানের পথ করে নিতে পারে এবং নতুন করে কোন অপরাধে না জড়ায়।