শেষবারের মত হলেও লাশটা দেখতে চাই

প্রকাশিত: ৩:৩৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : ১৩ দিন পেরিয়ে গেছে। এখনও কোন খবর পাচ্ছি না। একেক জন একেক রকমের কথা বলছে প্রতিনিয়ত। কেউ বলছে জীবিত রয়েছে, আবার কেউ বলছে এতদিনে মারা গেছে। কার কথা বিশ্বাস করবো তাই বুঝতে পারছি না এখন।

এভাবেই কথাগুলো বলেছেন সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ভোলার লালমোহনের ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চতলা এলাকার আমিন উদ্দিন মিয়া বাড়ির জেলে আবুল কালামের স্ত্রী পারুল বেগম।

নিখোঁজ আবুল কালামের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।

পারুল বেগম বলেন, ‘প্রতিদিন অপেক্ষা করছি। হয়তো তিনি ফিরে আসবেন। আর কত অপেক্ষা করতে হবে তা জানি না। প্রতিটি দিন পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে শঙ্কাও। যদি জীবিত না থাকেন তাহলে শেষবারের মত হলেও লাশটা অন্তত দেখতে চাই। দাফন করতে চাই পরম যত্নে। তবুও বলতে পারবো স্বামী চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন আমাদের আঙ্গিণায়। এ জন্য প্রশাসনের কাছে দাবী করছি আমার স্বামী যদি জীবিত না-ও থাকেন তাহলে তার লাশটি আমাদের যেন এনে দেন।’

নিখোঁজ জেলে আবুল কালামের ছেলে আরজু বলেন, ‘বাবার বয়স প্রায় ৩০ বছর হয়েছে। বৃদ্ধ বয়সে বাবাকে বহুবার মাছ শিকারে যেতে নিষেধ করেছি। এটা তার কাছে যেন নেশা হয়ে গিয়েছিল। আমাদের অগোচরেও সে মাছ শিকারের জন্য চলে যেতেন। এখন হয়তো আর কখনও বাবাকে নিষেধ করতে পারবো না। বাবা হয়তো চিরদিনের জন্য হারিয়ে গিছেন অথৈ জলের তলে।’

লালমোহন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভির আহমেদ বলেন, ‘ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ ৭৫ জেলে জীবিত ফেরার পরও এখনও খোঁজ মিলেনি আবুল কালাম নামের এক জেলের। তার সন্ধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আবুল কালামের সন্ধানের জন্য তার ছবি বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে দেয়া হয়েছে।’

গত ১৯ অগাস্ট (শুক্রবার) গভীর রাতে বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার ফিশিং গ্রাউন্ড এলাকায় মাছ শিকারে গিয়ে ঝড়ের কবলে পড়ে উপজেলার বাতিরখাল মৎস্য ঘাটের হারুন অর রশিদ ফারুকের মাছ ধরা ট্রলার এমভি লামিয়া ১৩ জেলেকে নিয়ে ডুবে যায়। সাগরে এ দুর্ঘটনার পর ওই ট্রলারের ১২ জেলে নিখোঁজের পর জীবিত ফিরলেও এখনও সন্ধান মিলেনি আবুল কালামের। এছাড়াও ওইদিন লালমোহনের আরও চারটি ট্রলার ঝড়ের কবলে পড়ে ডুবে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া আরও ৬৩ জেলে জীবিত অবস্থায় দুই দিন পর বাড়িতে ফেরেন।