ড্রাগন চাষে সফল রাজশাহীর মোফাক্কার দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ১০:৫৯ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২২ অনলাইন ডেস্ক : ড্রাগন চাষে সফলতা পেয়েছেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বারনই নদীর তীরবর্তী পূর্ব পুঠিয়াপাড়া গ্রামের মোফাক্কার হোসেন। দেশে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে খাবারের চাহিদাও বাড়ছে। তাই চাহিদা অনুয়ায়ী একই জমিতে একই সময় দুই ফসল অর্থাৎ সাথী ফসল উৎপাদনে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। জমিতে মূল ফসলের (ড্রাগন) সঙ্গে সাথী ফসল চাষে সফলতা পাওয়ায় এ পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদনে দিন দিন চাহিদা বাড়ছে রাজশাহী অঞ্চলের চাষিদের। দেশের খাবারের চাহিদা পূরণ করতে একই জমিতে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে অধিক ফসল উৎপাদনে কৃষকদের নানা পরামর্শ প্রদানসহ মাঠে কাজ করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষিবিদরা। বিদেশি ফল ড্রাগন চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে সবজি চাষ করেও লাভবান হওয়া সম্ভব। ড্রাগনের সাথে বাঁধাকপি, লাউ, ডাঁটা শাক, ধুন্দল, বেগুন, চাল কুমড়া ও করলা চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে সফলতা অর্জন করেছেন চাষিরা। রাজশাহী জেলার পবা উপজেলায় ধান, শাক-সবজি ও ড্রাগনসহ মৌসুমী ফল চাষে রয়েছে যথেষ্ট সম্ভাবনা। দু’ফসলি ও তিন ফসলি এসব জমিতে কৃষি বিভাগের নির্দেশনায় মৌসুম ভিত্তিক সঠিকভাবে চাষাবাদ এবং পরিচর্চা করে আর্থিক স্বচ্ছলতা পাচ্ছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা। এতে করে দিন দিন কৃষকদের মধ্যেও উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা দিচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা কৃষকরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করে আসছেন। এসব চাষাবাদের মধ্যে ড্রাগন, টমেটো, আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, লাউ, বেগুন, ঝিঙা, করলা ও বিভিন্ন ধরনের শাক উল্লেখ্যযোগ্য। এ ছাড়াও কৃষি বিভাগের পরামর্শে ড্রাগনের সঙ্গে একই জমিতে নিয়ম অনুযায়ী বাঁধাকপি, লাউ, ঝিঙ্গা, পটল, বেগুন চাষ করে সফলতা আসায় এ পদ্ধতিতে ফসল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা। জেলার পবা উপজেলার বারনই নদীর তীরবর্তী জমিতে ড্রাগন চাষের পাশাপাশি শাক সবজি চাষের বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। পবা উপজেলার বারনই নদীর তীরবর্তী পূর্ব পুঠিয়াপাড়া গ্রামের মোফাক্কার হোসেন ৩ বিঘা জমিতে একই সাথে ড্রাগন এবং বাঁধাকপি চাষ করেছেন। সিমেন্টের রিং এর উপর ড্রাগন এবং মাটিতে বাঁধাকপি এটি খুবই ফলপ্রসু বলে জানিয়েছেন মোফাক্কার হোসেন। ইতিমধ্যে তিনি গত ৩ বছরে এ পদ্ধতি অবলম্বন করে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ড্রাগন এবং সবজি চাষের মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন। লাভজনক হওয়ায় এবছর তিনি ৩ বিঘা জমিতে ড্রাগনের সিমেন্টের মাচার নিচে একই সাথে বাঁধাকপি লাগিয়েছেন। সরেজমিনে ড্রাগন বাগান ঘুরে দেখা গেছে- জেলার পবা উপজেলার বারনই নদী সংলগ্ন অঞ্চল পূর্ব পুঠিয়াপাড়া গ্রামের মাদ্রাসার শিক্ষক মোফাক্কার হোসেন পতিত জমিতে বিদেশী ফল ড্রাগন চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন। নানা গুন সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল বানিজ্যিকভাবে চাষের পাশাপাশি অন্যান্য সবজি চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে তার ড্রাগন বাগানের ফাঁকা জমিতে বাঁধাকপির চাষ করেছেন। এর আগে সেখানে বেগুন ও আলু চাষ করেছিলেন তিনি। রোগ-বালাই কম হওয়ার পাশাপাশি চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায় এবং বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় বিদেশি এ ফল চাষে এরইমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আশপাশের চাষিরা। নওহাটা পৌর এলাকার পূর্ব পুঠিয়াপাড়া গ্রামে ৩ বিঘা জমিতে ৪৬০টি সিমেন্টের পিলার ও রিং এর উপর প্রায় ২ হাজার ড্রাগন গাছ লাগানো রয়েছে। পাশাপাশি বাঁধাকপি চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে ড্রাগনের মাচার নিচে একই সাথে আগাম বাঁধাকপি রোপন করছেন। তার দেখাদেখি এলাকার অন্যান্য কৃষকরাও ঝিঙ্গা, চাল কুমরা, লাউ, পটল ও শসার মাচার নিচে সাথী ফসল হিসেবে আদাসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। মোফাক্কার হোসেন জানান, তার ৩ বিঘা জমিতে ড্রাগন এবং বাঁধাকপি চাষ করেছেন। এখানে সার প্রয়োগ, সেচ খরচ ও লেবার খরচ বাদে তিন বিঘা জমি থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা উপার্জন হবে বলে তিনি আশা করছেন। ড্রাগন চাষি মোফাক্কার হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৮ সালে ৩ বিঘা জমিতে ড্রাগনের কাটিং রোপণ করেন। কাটিং রোপণের পর থেকে আড়াই বছর সময় লাগে ফল পেতে। বাগান মালিক মোফাক্কার হোসেন জানান, পবা উপজেলার বারনই নদী সংলগ্ন পূর্ব পুঠিয়াপাড়া এলাকায় তিন বিঘা জমিতে বেড তৈরি করে ড্রাগন চারা রোপণ করেন। বেড তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপন ও গাছের পরিচর্যায় এ পর্যন্ত তার প্রায় ৫ লাখ টাকারও বেশি খরচ হয়েছে। তার বাগানে লাল ও সাদা দুই প্রকারে ড্রাগন চারা রোপন করেছেন। বর্তমানে প্রতিটা গাছে ড্রাগন ফল ধরেছে। পর্যায়ক্রমে ফলন আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা করছেন তিনি। সৌখিন এ চাষি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমার বাগানের ড্রাগন ফল বাজারজাত করা শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাজারে মৌসুমে ফল ভরপুর থাকায় প্রতি কেজি ড্রাগন পাইকারি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ড্রাগন চাষের প্রথমে পরিচর্যা জনিত সমস্যার কারণে ২০২০ সালে অল্প পরিসরে ফল পেলেও এবার গোটা ড্রাগনের বাগান জুড়ে মন জুড়ানো ফুল আর ফুল। ড্রাগনের ফুলের সঙ্গে আনন্দে দোল খাচ্ছে চাষি মোফাক্কার হোসেনের মনে। তিনি জানান, ফুল ফোটার ৩০ দিনের মাথায় ড্রাগন ফল তোলার উপযুক্ত হয়। ড্রাগন চাষে কীটনাশক ব্যবহার করা প্রয়োজন হয়না শুধুমাত্র ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হয় ফলকে নিরাপদ রাখার জন্য। ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর ৮ থেকে ১০ মণ ড্রাগন বিক্রি করেন। চার চালান প্রতি ৮ থেকে ১২ মণ। ২০২১ সালে ৬৬ কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি করে খরচ বাদে ১৯ হাজার টাকা লাভ করলেও এবার দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন সফল ড্রাগন চাষি মোফাজ্জল হোসেন। শখের বসে ড্রাগন চাষ শুরু করলেও এখন তিনি বাণিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষ করছেন বলে জানান। স্থানীয় তরুণ চাষি মামুন জানান, ড্রাগন ক্ষেতটি খুব সুন্দর ও পরিপাটি। প্রতিটি গাছেই ফল ধরেছে। এ ছাড়াও ড্রাগন ফলের দামও বাজারে বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও ড্রাগন ফলের পাশাপাশি সাথী ফসল চাষ করার সুযোগ রয়েছে। এজন্য তিনিও ভাবছেন কিভাবে এটার আবাদ শুরু করবেন। মোফাক্কার হোসেনের ড্রাগন বাগানের দেখভালের দায়িত্বে থাকা শরিফুল ইসলাম বলেন, দুই বছর আগে মাদ্রাসার শিক্ষক মোফাক্কার হোসেন তিন বিঘা জমিতে ৫ হাজার ড্রাগন চারা রোপণ করেন। সেগুলোর সঠিকভাবে পরিচর্যার পর এবারে প্রতিটা গাছেই ফল ধরেছে। সফলতার সাথে ড্রাগনে পাশাপাশি একই জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করছি। তাই ড্রাগনের ক্ষেত দেখতে আশপাশের উৎসুক মানুষও এখানে ভিড় করছেন। অনেকেই জানতে চাইছেন, কিভাবে অল্প সময়ে ফলন আনতে সক্ষম হয়েছি আমরা। রাজশাহী কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, মোফাক্কার হোসেন একই জমিতে একই খরচে দু’তিন জাতের ফসল উৎপাদন করে এলাকার বেকার যুবকদের অনুপ্রেরণা যুগীয়েছেন। এখন তার দেখাদেখি এলাকার অন্যরাও তাদের জমিতে সাথী ফসল চাষ শুরু করেছেন। তিনি আরো জানান, মোফাক্কার হোসেনের উদ্যোগটি খুবই ভালো, আমরা তার দেখভাল করছি। তার ড্রাগনের জমিতে বেশি ফলন উৎপাদনে আমরা বিভিন্ন পরামর্শ দিতেছি। এ পদ্ধতিটির প্রতি এলাকার কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাসহ আমরাও সর্বাক্ষনিক মাঠে কাজ করছি। Share this:FacebookX Related posts: চাটমোহরে ধানের বাজারে নেই প্রত্যাশিত দাম, হতাশ কৃষক ধান ক্রয়ে অনিয়ম সহ্য করা হবে না : খাদ্যমন্ত্রী নওগাঁয় গাছে গাছে আামের মুকুলের সমারোহ আত্রাইয়ে ধানের দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি টানা বৃষ্টিতে বোরো ধান নিয়ে বেকায়দায় রাজশাহীর কৃষকরা রাণীনগরের ড্রাগন যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে নওগাঁয় করলা চাষে ভাগ্যের বদল হয়েছে কৃষক জলিলের মধ্য প্রাচ্যের সবজি স্কোয়াশ চাষ হচ্ছে এখন আত্রাইয়ের মাটিতে জয়পুরহাটে কালবৈশাখীতে সাড়ে ৪ কোটি টাকার ফসলহানি নওগাঁয় শ্রমিক সংকটে বোরো ধান কাটা মাড়াই ব্যাহত আমের রাজধানীতে লিচুর রাজত্ব বগুড়ায় আমনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮৩ হাজার হেক্টর SHARES Matched Content কৃষি বিষয়: ড্রাগন চাষেরাজশাহীর মোফাক্কারসফল