ফ্ল্যাটে বাস করে শিশুরা ফার্মের মুরগীর মতোই হয়ে যাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২২

অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের শিশুরা, এখন তো সব ফ্ল্যাটে বাস করে, ফ্ল্যাটে বাস করে করে তারা ফার্মের মুরগীর মতোই হয়ে যাচ্ছে। হাঁটা-চলা… আর এখনতো মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ আর আইপ্যাড এগুলো ব্যবহার করে সারাক্ষণ ওগুলোর মধ্যে পড়ে থাকা। এটা আসলে মানসিক ভাবে, শারীরিক ভাবে সুস্থতার লক্ষণ না।’

বুধবার সকালে গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০১৩-২০২১’- বিতরণ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাবা-মা, অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অন্তত বাবা-মা, অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ কিছু সময়ের জন্য হলেও সন্তানরা যাতে হাত-পা ছুঁড়ে খেলতে পারে সে বিষয়ে আপনাদের উদ্যোগ নেওয়া উচিৎ। আর প্রত্যেকটা এলাকায় খেলার মাঠ থাকা একান্ত ভাবে প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা-দৌড় ঝাঁপের মধ্যে দিয়ে শারীরিক, মানসিক বিকাশ হওয়ার সুযোগ পায়। খেলাধুলা, স্পোর্টস এটা একটা জাতি গঠনে বিশেষ অবদান রাখে বলে আমি বিশ্বাস করি। খেলাধুলা এবং শরীর চর্চার মাধ্যমে শারীরিক-মানসিক ভাবেও আমাদের ছেলে-মেয়েরা যথেষ্ট উন্নত হবে। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খেলাধুলার বিষয়ে আমাদের আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া উচিৎ। সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো ঢাকা শহরেই খেলাধুলার জায়গা কম। এরইমধ্যে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যেখানে খালি জায়গা পাচ্ছি আমরা খেলার মাঠ করে দিচ্ছি।’

এ সময় তিনি রাজধানীর বাইরে দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম করার বিষয়টি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে খেলাধুলার সুবিধাদির উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে দেশের ১২৫টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও ১৮৬টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে দেশের অবশিষ্ট ১৭১টি উপজেলায় শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ চলমান রয়েছে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের খেলাধুলার প্রতি আগ্রহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লিখেছেন, ‘আব্বার টিম ও আমার টিমে যখন খেলা হতো তখন জনসাধারণ খুব উপভোগ করত। আমাদের স্কুল টিম খুব ভাল ছিল। মহকুমায় যারা ভালো খেলোয়াড় ছিল, তাদের এনে ভর্তি করতাম এবং বেতন ফ্রি করে দিতাম।’

দেশিয় খেলাগুলো আবারও ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের অভ্যন্তরে, আমাদের গ্রামে অনেকগুলো খেলা আছে, এসব গ্রামীণ খেলাগুলো কিছু চালু করা হয়েছে। এগুলো সচল করতে হবে। যেগুলোতে খুব বেশি খরচও লাগে না। নিজেরা খেলবে, আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতা, এই প্রতিযোগিতা যাতে ব্যাপক ভাবে চলে সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে যথেষ্ট সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে যা যা প্রয়োজন সেটাও আমরা করে দিচ্ছি।’

নিয়মিত খেলোয়াড়দের পাশাপাশি অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়দের কৃতিত্বপূর্ণ অর্জনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রাও ভালো পারদর্শীতা দেখাচ্ছে। তারা সুস্থদের চেয়েও ভালো করছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় অটিস্টিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী খেলোয়াড়রা বিভিন্ন সময়ে স্পেশাল আলিম্পিকে অংশ নিয়ে ২১৬টি স্বর্ণ, ১০৯টি রৌপ্য ও ৮৪টি ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করে দেশকে সম্মানিত করেছে। এ বছরের মার্চে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত ‘বঙ্গবন্ধু চার-জাতি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ভারতকে ৯ উইকেটে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে।’

অনুষ্ঠানে ৮৫ জন গুণী খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠককে ২০১৩ হতে ২০২০ সালের জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল ৭৭ জন ক্রীড়াবিদের হাতে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে (ভার্চ্যুয়ালি) আরও আট জন বিজয়ীকে পুরস্কার দেওয়া হয়।