বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায় প্রকাশিত: ২:১০ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১১, ২০২১ বজ্রপাত থেকে বাঁচার উপায় নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি দেশে বজ্রপাতের ঘটনা বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে প্রাণহানিও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বঙ্গোপসাগর থেকে অব্যাহত গরম আর আর্দ্র বাতাস প্রবেশ করে বাংলাদেশে। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে রয়েছে পাহাড়ি এলাকা। আর উত্তরে হিমালয়ের অবস্থান। এসব পাহাড়ি অঞ্চল থেকে আসে ঠান্ডা বাতাস। এই দুই ধরনের বাতাসের সংমিশ্রণ তৈরি হচ্ছে বজ্রপাতের অনুকূল পরিবেশ। ঘটছে বজ্রপাত। এই বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. এ হাসিব চৌধুরী বলেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসেবে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ব্যাপকহারে তাল গাছসহ উঁচু জাতের গাছ লাগাতে হবে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বজ্রপাত সরাসরি ভূমিতে আঘাত হানার আগেই উঁচু গাছ আটকে দিতে পারে। তবে তাল গাছ লাগানো এবং গাছ উঁচু হওয়া পর্যন্ত কয়েক দশক লেগে যাবে। তাই জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে উঁচু টাওয়ারগুলোয় বজ্রনিরোধক দণ্ড বসাতে হবে। বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. একেএম সাইফুল ইসলাম সময়ের আলোকে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ্রপাত হয় বলে আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশ্বে বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই মারা যায় বাংলাদেশে। বিগত বছরগুলোয় দেশে অন্তত ১৫ শতাংশ বেড়েছে বজ্রপাত। প্রযুক্তির ব্যবহার করে বজ্রপাতে মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে। এদিকে, বিশেষজ্ঞরা বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছু করণীয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে- ১. ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। ২. কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেওয়া যাবে না। ৩. জানালা থেকে দূরে থাকতে হবে। সঙ্গে জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতর থাকতে হবে। ৪. ধাতব বস্তু স্পর্শ করা যাবে না। ৫. বজ্রপাতের সময় কোনো বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা যাবে না। ৬. গাড়ির ভেতরে থাকলে সম্ভব হলে গাড়ি নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। তবে, গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা যাবে না। ৭. খোলা ও উঁচু জায়গায় থাকা যাবে না। যেমন ছাদ। বজ্রপাতের সময় ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যেতে হবে। ৮. বজ্রপাতের সময় পুকুর বা জলাবদ্ধ জায়গায় থাকা যাবে না। ৯. কয়েকজন মিলে খোলা কোনো স্থানে থাকার সময় বজ্রপাত শুরু হলে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যেতে হবে। ১০. যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তা হলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে চোখ বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু মাটিয়ে শুয়ে পড়া যাবে না। ১১. বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা পরা যাবে না। আবার খালি পায়েও থাকা যাবে না। এ সময় রাবারের জুতা পরতে হবে। ১২. বাড়িকে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ রাখতে আর্থিং সংযুক্ত রড বসাতে হবে। ১৩. বজ্রপাতে আহত হলে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতো করেই চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে বা হাসপাতালে নিতে হবে। একই সঙ্গে এ সময় আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এ বিষয়ে প্রাথমিক চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ সবারই থাকা দরকার। এদিকে, ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম’ তাদের এক গবেষণায় উল্লেখ করেছে, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়ে আছে। এ কারণে জলীয়বাষ্প যখন এর সংস্পর্শে আসে, তখনই শুরু হয় বজ্রপাত। যা দেশে আগের তুলনায় বেশি হচ্ছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে বজ্রপাত প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এক বছরে ৮০ থেকে ১২০ দিন বজ্রপাত হয়। এর মধ্যে এপ্রিল থেকে জুনে হয় ৭০ শতাংশ। ডিজাস্টার ফোরাম নামে একটি সংগঠনের গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে এক হাজারের কিছু বেশি মানুষের মৃত্যু হলেও ২০১০ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত ১০ বছরে ২ হাজার ৭৭৪ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে শিশু ৫২৬, নারী ৪০১ ও পুরুষ ১ হাজার ৮৪৭ জন। গত ১০ বছরের মধ্যে ২০১০ সালে সবচেয়ে কম ১২৩ জন আর ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫০ জন নিহত হন। বাকি বছরগুলোতে ২০০ থেকে ৩০০-এর মধ্যে এই সংখ্যা ওঠানামা করে। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মারা গেছে ৩৭১ জন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে নিহতের ঘটনা ২৭৭টি। মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালের ১৭ মে বজ্রপাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশ সরকার। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের মে মাসে বজ্রপাত দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। ওই সময় বজ্রপাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে সারা দেশের বিদ্যুতের খুঁটিগুলোতে বজ্রনিরোধক লাগানোর পরিকল্পনার কথাও বলা হয়েছিল। আর দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম হিসেবে ৩১ লাখ তাল গাছ রোপণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও পরে দেশের তিন পার্বত্য জেলা ছাড়া বাকি ৬১ জেলায় সাড়ে ৩১ লাখ তালের আঁটি লাগানো হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এমএ ফারুক সময়ের আলোকে বলেন, ‘জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম ব্যবহার করে দেখা গেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। এই চার জেলাই সীমান্তে। পাহাড়বেষ্টিত। বিভাগগুলোর মধ্যে রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও ও লালমনিরহাট, রাজশাহী বিভাগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ বিভাগে নেত্রকোনা, ঢাকা বিভাগে কিশোরগঞ্জ ও চট্টগ্রাম বিভাগে রাঙ্গামাটিতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে বজ্রপাত বেশি হলেও মানুষ মারা যাচ্ছে বেশি উত্তরাঞ্চলে। দৈনিক সময় সংবাদ ২৪/ ডি, এন Share this:FacebookX Related posts: হাত থেকে মেহেদি তোলার সহজ উপায় SHARES Matched Content লাইফস্টাইল বিষয়: থেকেবজ্রপাতবাঁচার উপায়