কৃষি কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃত্যু, স্বামী আটক

প্রকাশিত: ৯:৪০ অপরাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক ; রাজশাহীর পুঠিয়ায় খাদিজা আক্তার (৩৫) নামে একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই কর্মকর্তা আত্মহত্যা করেছে নাকি তাকে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে গুঞ্জণ তৈরি হয়েছে। তবে নিহতের ভাই দাবি করছেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে ওই কর্মকর্তার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার স্বামীকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

খাদিজা আক্তার উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আব্দুল ওহাবের স্ত্রী। তিনি পবা উপজেলা কৃষি অফিসের অধীনে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী আব্দুল ওহাব (৪০) রাজশাহী পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক। মঙ্গলবার (২৯ জুন) দিবাগত রাতের যে কোনো সময় তাদের নিজ বাড়ি ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

খাদিজা আক্তারের ভাই আবুল কালাম জানান, ‘আমার বোন আত্মহত্যা করেনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারণ লাশের শরীরে আত্মহত্যার কোনো আলামত নেই। তাকে কৌশলে মেরে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া ওই বাড়ির পাশের কোনো লোক খাদিজাকে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখেনি। আমরা বিষয়টি আইনিভাবে লড়ব।

প্রতিবেশী আব্দুল্লাহ জানান, আব্দুল ওহাব ও খাদিজা আক্তার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২০ বছর আগে। খাদিজার বাবার বাড়ি বগুড়া জেলা সদরে। আর তারা র্দীঘদিন যাবত দুজনই চাকরির সুবাদে রাজশাহী শহরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। কিন্তু প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। আব্দুল ওহাব একজন শিক্ষিত মানুষ ও শিক্ষক হলেও তার স্ত্রীর ওপর মাঝে মধ্যে অমানুষিক অত্যাচার করত। প্রকাশ্য মারধর করত। এত অত্যাচার সয়েও তার তিনটি সন্তানের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে এখানেই থাকত খাদিজা। সে সূত্রে মঙ্গলবার বিকেলেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। এরপর রাতে কি হয়েছে তা পাশের বাড়ির কেউ জানে না। ভোরে তার স্বামীর বাড়ির লোকজন বলছেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন।

নিহতের ছেলে গালিব (৯) জানান, ঘটনার রাতে এই বাড়িতে তারা তিন ভাই মা-বাবা ও দাদী ছাড়া কেউ ছিলেন না। রাতে আমরা সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। বাবা ও মার মধ্যে কোনো ঝগড়া বা মারামারি আমরা দেখতে পাইনি। এরপর অনেক রাতে দাদী আমাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলেছেন। এরপর গিয়ে দেখি মা মরে গেছে। তবে কিভাবে মরেছে তা আমি জানি না।

নিহতের স্বামী আব্দুল ওহাব জানান, আমরা রাতের খাবার শেষ করে শুয়ে পড়ি। এরপর সে কখন উঠে গলায় দড়ি দিয়েছে তা বুঝতে পারেনি। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছোট ছেলে ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি শুরু করে। এরপর তাকে রুমে না পেয়ে খোঁজ করি। একপর্যায়ে পুরনো ঘরের তীরে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পাই। এরপর সকালে থানায় খবর দেয়া হয়।

পুঠিয়া থানার অফিসার ইনর্চাজ (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন জানান, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নিহতের মাথায় আঘাতের চিহৃ রয়েছে। এতে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটা পরিকল্পিত হত্যা হতে পারে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তবে হত্যা না আত্মহত্যা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে।