সরকারি শিল্প আলোর মুখ দেখে না : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৮:০৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৯, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাট ও বস্ত্র শিল্পের কথা উল্লেখ করে অত্যন্ত আক্ষেপের সঙ্গে বলেছেন, সরকারিভাবে কোনো শিল্প চালাতে গেলে সেটা আলোর মুখ দেখে না। কিন্তু বেসরকারি শিল্প ঠিকই লাভ করে বছরের পর বছর টিকে থাকে। তিনি বলেন, সরকারি শিল্পে সমস্যাটা কোথায় বুঝি না।

বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত বস্ত্রমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে আমি দেশে আসার পর সারা দেশ ঘুরে বেড়িয়েছি। আমি দেখেছি এ দেশের মানুষের কী অবস্থা। মানুষের পরণে ছিল জীর্ণশীর্ণ কাপড়। বিদেশ থেকে পুরোনো কাপড় এনে এদেশের মানুষের চাহিদা মেটানো হয়েছে। অধিকাংশ মানুষের ঘরবাড়ি ছিল না। চিকিৎসা ছিল না, ছিল না অন্ন বা খাবার। এমনই একটা অবস্থায় দিনযাপন করত এ দেশের মানুষ। সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।

শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ২১ বছর পর আমরা যখন ৯৬ সালে সরকারে আসি তখন আমরা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা ছাড়াও দেশকে অনেক দিক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মাঝখানে সাত বছর আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না। তখন আবার পিছিয়ে গেছে। এরপরে যখন ২০০৯ সালে আমরা সরকার গঠন করি তখন থেকে আমাদের আবার নতুন যাত্রা শুরু হয়। গত ১১বছরে বাংলাদেশে কী পরিমাণ এগিয়েছে তা আপনারা নিজেরাই উপলব্ধি করতে পারছেন। মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১৯০৯ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি এখন ৮ দশমিক ১৫ ভাগে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে সাথে মূল্যস্ফীতি আমরা পাঁচ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি নিম্নভাগে, এটা ভালো অর্থনীতির একটা সুফল।

তিনি বলেন, সরকার গঠন করার পর থেকেই আমরা বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দিচ্ছি। বিদ্যুৎ খাত থেকে শুরু করে সব খাতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আমরা বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দিয়ে আসছি। তার শুভ ফল দেশবাসী পাচ্ছে। আমরা বাজেট প্রায় ৯ গুণ বৃদ্ধি করেছি। বাজেটের ৯০ ভাগ বাস্তবায়ন করছি নিজস্ব অর্থায়নে। তৈরি পোশাক শিল্পে আমাদের ব্যাপকহারে মেয়েদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। দেশের উন্নয়নে তৈরি পোশাক শিল্প যথেষ্ট অবদান রেখে যাচ্ছে। শুধু পোশাক খাত নয়, অন্যান্য শিল্পেও আমরা সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করছি। তারা যেন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের বাজারে তাদের তৈরি পণ্য এক্সপোর্ট করতে পারে। সাথে সাথে বাংলাদেশে একটা বিশাল বাজার রয়েছে। এ বাজারটার চাহিদাও যেন মেটাতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিভিন্ন শিল্প-কলকারখানাতে যাতে অনবরত উৎপাদন হয়, কোনো বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় সেজন্য আমরা শিল্প-পুলিশের ব্যবস্থা করেছি। বিভিন্ন শিল্পে যাতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন করা যায় সেজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট যন্ত্রের ওপর শুল্ক কমিয়েছি। রফতানিকারকদের ঋণ সুবিধা এবং ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। রফতানিকারকরা ২৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার ঋণ সুবিধা নিতে পারেন, এ সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি, তখন পোশাক শ্রমিকদের মজুরি ছিল মাত্র ১ হাজার ৬শ টাকা। পরে তাদের বেতন আট হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। আমি জানি না পৃথিবীর কোনো দেশে একসাথে এত টাকা বেতন বাড়ায় কি না। শুধু পোশাক শিল্প নয়, অন্যান্য সেক্টরেও আমরা সকলেরই বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছি। এছাড়া পোশাকশিল্পের সদস্যরা যাতে নিরাপদে বসবাস করতে পারে সেজন্য তাদের হোস্টেল, ডরমেটরি নির্মাণ করে দিয়েছি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এরকম বিভিন্নভাবে আমরা তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি । এছাড়া আমরা বেশকিছু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলেছি। যেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।

বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মির্জা আজম ও মন্ত্রণালয়ের সচিব লোকমান হোসেন মিয়া।

আজ থেকে শুরু হওয়া বস্ত্রমেলা চলবে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই মেলা চলছে।

বস্ত্রখাতের উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখায় অনুষ্ঠানে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা হিসেবে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মরক তুলে দেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী।