ড্রামে নারীর লাশ, প্রেমিক পুলিশ কনস্টেবলসহ গ্রেফতার ৪

প্রকাশিত: ১২:১২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২০, ২০২১

অনলাইন ডেস্ক : রাজশাহীতে ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার করা তরুণীর লাশের পরিচয় মিলেছে। তার নাম ননিকা রাণী রায় (২২)। পেশায় তিনি একজন নার্স ছিলেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মিলনপুর গড়েয়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। বাবার নাম নিপেন চন্দ্র বর্মণ। রাজশাহী নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেছেন।

এই তরুণীকে হত্যায় জড়িত পুলিশের এক কনস্টেবল। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এসব বেরিয়ে এসেছে। রাজশাহী পিবিআই অভিযুক্ত কনস্টেবলসহ চারজনকে গ্রেফতারও করেছে। ওই নার্স অবিবাহিত ছিলেন। অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের সঙ্গেংর সাত-আট বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল।

এই কনস্টেবলের নাম নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩)। তিনি পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামের মৃত হেমান্ত সরকারের ছেলে। নিমাই রাজশাহীতে রেলওয়ে পুলিশে কর্মরত ছিলেন।

গত ০৬ এপ্রিল মহানগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একটি ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন নিমাই ও ননিকা। তারা লিভ টুগেদার করছিলেন বলে জানিয়েছেন পিবিআই কর্মকর্তারা।

গত শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) সকালে মহানগরীর উপকণ্ঠ সিটিহাট এলাকার একটি ড্রামের ভেতর থেকে ননিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। সে দিন তাঁর পরিচয় জানা যায়নি। এ নিয়ে মহানগরীর শাহমখদুম থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করা হয়। থানা পুলিশ বিষয়টির তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছিল পিবিআই। শেষে পিবিআই এই তরুণীর পরিচয় উদঘাটনের পাশাপাশি ঘাতকদেরও গ্রেফতার করল।

গ্রেফতার অন্যরা হলেন, মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়া মহল্লার কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার বিলশিমলা এলাকার আবদুর রহমান (২৫) এবং শ্রীরামপুর টি-বাঁধ এলাকার সুমন আলী (৩৪)। আবদুর রহমান মাইক্রোবাসের চালক। তিনি আগে হিন্দু ছিলেন। তখন তার নাম ছিল সঞ্জয় রায়। তার মাইক্রোবাসে করেই লাশ ফেলে আসা হয়েছিল।

সোমবার পিবিআইয়ের রাজশাহী কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, কনস্টেবল নিমাই বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম বুলবুলি রাণী দাস। তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে কর্মরত। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল নয় বলে এক সন্তানকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকেন। আর গত ০৬ এপ্রিল ননিকাকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া করেছিলেন নিমাই। ননিকা তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। সে কারণেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

হত্যার সময় নিমাইয়ের বন্ধু কবির আহম্মেদ ও সুমন আলী ননিকার হাত-পা চেঁপে ধরেছিলেন। আর নিমাই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করেন। পরে বাজার থেকে চাল রাখা একটি ড্রাম কিনে আনেন। সেই ড্রামে লাশ ঢুকিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে সেটি নির্জনে ফেলে আসা হয়।

পরিবার জানায়, ননিকা সদ্য নার্সিং পাস করেছেন। এরপর রাজশাহী শহরের একটি ক্লিনিকে চাকরি নিয়েছিলেন। মহানগরীর পাঠানপাড়া এলাকায় একটি ছাত্রী নিবাসে থাকতেন। সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। পুলিশ কনস্টেবল নিমাইয়ের সঙ্গে গিয়ে আলাদা বাসায় ওঠার বিষয়টি পরিবার জানত না। হত্যাকাণ্ডের পর তারা এটি জেনেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহীতে কর্মরত ছিলেন কনস্টেবল নিমাই। সাত বছর ধরে আছেন রাজশাহী রেল পুলিশে। এর আগে তিনি মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) ছিলেন। সে সময় ডিবি কার্যালয় এলাকার এক কলেজছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করেছিলেন। ভিডিওটি কম্পিউটারের দোকান থেকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন তাকে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে নানা কৌশলে চাকরি ফিরে পেয়ে রেল পুলিশে যোগ দেন। এবার আগের চেয়েও ভয়াবহ ঘটনা ঘটালেন এই কনস্টেবল।

পিবিআই কর্মকর্তা আবুল কালাম আযাদ জানান, তিন দিনেই এ হত্যাকাণ্ডের সমস্ত বিষয় উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে। সোমবার দুপুরে শাহমখদুম থানা পুলিশ হত্যা মামলাটি তাদের কাছে হস্তান্তর করেছে। আসামিরা পিবিআইয়ের কাছে প্রাথমিক ভাবে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পরে তাদের আদালতে তোলা হলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীও দিয়েছে। দ্রুতই আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।