ভালোবাসার দিনে বসন্তবরণ, ফুলবাজার সরগরম

প্রকাশিত: ৫:১৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২১

সময় সংবাদ ডেস্কঃএকই দিনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা ফাগুন অর্থাৎ বসন্তের প্রথম দিন। এরপর আবার সপ্তাহ বাদে আসছে একুশে ফ্রেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রতি বছরের মতো এবছরও এসব উপলক্ষকে ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে ফুলেরবাজার। তবে এবার দামের উত্তাপটা একটু বেশিই মনে হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায়।

রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি)ও পয়লা ফাল্গুনে সবচেয়ে বেশি চাহিদার ফুল বাসন্তী গাঁদার চেইন (ডাবল)। এর দাম ৫০ থেকে বেড়ে ৭০ টাকা হয়েছে। যা ১০০ টাকার নিচে বেচলে লাভ হচ্ছে না। এছাড়া প্রতি হাজার বাসন্তী গাদা ফুল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বেচাকেনা হতো, যা এখন ৫০০ টাকার ওপরে।’

‘এছাড়া গ্লাডিওলাস পাইকারিতে ৮-১০ টাকা থেকে বেড়ে ১৩-১৫ টাকা হয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। রজনীগন্ধা ৬-৭ থেকে বেড়ে এখন ৯-১০ টাকা, বিক্রি ১৫ টাকা, ৫ টাকার জারবেরা ফুলের পাইকারি দাম বেড়ে ১০ থেকে ১৫ টাকা হয়েছে। বিক্রি করছি ২০ টাকায়।’

গত বছর গদখালীর গোলাপের সবচেয়ে ভালোটার দাম ছিল ছিল ৮ থেকে ১২ টাকা। সেটা এখন ১৫ থেকে ১৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি করছি। অর্থাৎ দাম গত বছরের ভ্যালেন্টাইনের তুলনায় প্রায় দেঁড়গুণ।’

রাজধানীর শাহবাগের ফুলের দোকানের এক মালিক জানান, ‘ফুলে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রভাব পড়েছে। কারণ যে সময় পুরো দেশ লকডাউন ছিল, তখন প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ফুল পচে নষ্ট হয়েছে। তখন অনেকে ফুলের বাগান নষ্ট করে অন্য কাজে লাগিয়েছেন। এখন সে কারণে ফুলের সরবরাহ কম।’

আরেক ব্যবসায়ী জানান, ‘ওই সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু ডিসেম্বরেই ব্যবসা ভালো গেছে। আর এখন এসেছে ভ্যালেন্টাইন আর ফাল্গুন। হঠাৎ সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বাড়ায় এখন দাম খুবই বাড়তি।’

ফুলের দাম বেশি হওয়ায় যে বিক্রেতারা খুশি তা কিন্তু নয়। তারাও শঙ্কায় রয়েছেন চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে। করোনার প্রকোপ কিছুটা কমলেও এখনো অনেকেরই মধ্যে উৎসবের আমেজ নেই। তাই এসব দিবসে কত টাকার ফুল বিক্রি হবে, তা নিয়ে শঙ্কা তাদের। এর মধ্যে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ব্যাপকহারে কমেছে। উৎসব আয়োজনও সীমিত হয়ে পড়েছে। বিক্রেতারা অধিকাংশ সময় ফুল বিক্রি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকছেন।

এদিকে, বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য বলছে, শুধু ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা ৫০ লাখের বেশি হলেও চাহিদা অনুযায়ী এ বছর জোগান কিছুটা কম হতে পারে। গত বছর ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণকে কেন্দ্র করে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল।

সারাদেশে বর্তমানে ছয় হাজারের বেশি ছোট-বড় ফুলের দোকান আছে। এর মধ্যে শুধু রাজধানীতেই আছে সাড়ে ৬০০ ফুলের দোকান। তবে ভালোবাসা দিবসের দিন সারাদেশে পাড়া-মহল্লায় ফুলের অস্থায়ী দোকান খুলে অনেকেই এ ব্যবসায় জড়ান। সে সংখ্যা প্রায় হাজারের কাছাকাছি।

এদিকে সরবরাহ কমায় দাম বাড়ার বিষটি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি। তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের অন্তত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বেচাকেনা বন্ধ থাকায় চাষিরা বাগান থেকে ফুল কেটে তা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। অনেক বাগানে এখনো ফুল নেই। তাই বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রায় ১৬শ’ কোটি টাকার ফুলের বাজার রয়েছে। এরমধ্যে উৎসবকেন্দ্রিক বেচাকেনা হয় এক-তৃতীয়াংশ। ভালোবাসা দিবস অথবা বর্ষবরণের মতো উৎসবে একদিনেই দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়ে থাকে।