কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশিত: ৪:৫৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২১

সময় সংবাদ : গত কয়েক বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত শিল্পায়ন সাধিত হলেও মূলত কৃষিই যে বাংলাদেশের আয়-উন্নতির প্রাণভোমরা, একথা অস্বীকার করা যাবে না কিছুতেই। মনে রাখতে হবে, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখনো গ্রামে বসবাস করে এবং তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশায় জড়িত।

করোনামহামারীজনিত একটানা দীর্ঘ ৬৬ দিন লকডাউনে দেশের শিল্প-কারখানাসহ প্রায় সব কিছুর কার্যক্রম বন্ধ অথবা স্থগিত থাকলেও কৃষিকাজ থেমে থাকেনি একদিনের জন্যও। যে কারণে বোরো-আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক ধান-চালের আশানুরূপ দাম পেয়েছে। অন্যদিকে প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে কেউ না খেয়ে থাকেনি। মারা যায়নি অনাহারে। মোটকথা, কৃষিই মূলত বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। কৃষিমন্ত্রী ঘোষিত প্রান্তিক ৭ লাখ কৃষকের জন্য প্রায় ৮১ কোটি টাকা মূল্যের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক ও আশাব্যঞ্জক। এর আওতায় দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭০০ কৃষককে বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে বীজ, সার ও পরিবহণ ব্যয় বাবদ নগদ অর্থ সহায়তা।

বিশেষ করে খরিপ মৌসুমে গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, শীতকালীন মুগ, পেঁয়াজ, তিল ইত্যাদির উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেয়া হবে এই সহায়তা। দেশের মানুষের জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ সুষম খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শস্য বহুমুখীকরণসহ উন্নত ও আধুনিক যন্ত্রকৌশল অবলম্বন, উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড জাত প্রতিস্থাপন, সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিযোজনও জরুরি।

কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশ আজ শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, বরং উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যে ভরপুর। তবে বাস্তবতা হলো, দেশে গত কয়েক বছরে ধান-পাট-ফলমূল-শাক-সবজি, তরিতরকারি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, চা, চামড়া ইত্যাদির উৎপাদন বাড়লেও ত্রুটিপূর্ণ মার্কেটিংয়ের কারণে কৃষক ও উৎপাদক শ্রেণী প্রায়ই বঞ্চিত হয় ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে। এটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক যে, স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চললেও অদ্যাবধি আমরা একটি সমন্বিত ও আধুনিক কৃষিপণ্য বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি।

ফলে একদিকে উৎপাদিত ফসল ও পণ্যদ্রব্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক, অন্যদিকে সেসব পণ্য উচ্চমূল্যে কিনতে হয় ভোক্তা তথা ক্রেতা সাধারণকে। সে অবস্থায় দেশে ধান-চাল-পাটসহ কৃষিজাত পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার জন্য তৃণমূল থেকে রাজধানী পর্যন্ত একটি আধুনিক ও সমন্বিত মার্কেটিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি ও অপরিহার্য।