২০২০ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে

প্রকাশিত: ১০:৩১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০২০ সালে পঞ্চগড়সহ উত্তরবঙ্গের ৫ জেলায় সমতলের ১০টি চা বাগান ও ৭ সহস্রাধিক ক্ষুদ্রায়তন চা চাষীর বাগান থেকে ১ কোটি ৩ লক্ষ বা ১০ দশমিক ৩০ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছে। অর্জিত হয়েছে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা।
এ বছর চায়ের জাতীয় উৎপাদন হয়েছে ৮৬ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন কেজি। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চলের সমতলের চা বাগান থেকে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ জাতীয় উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। কোভিড পরিস্থিতিতেও এ বছর চা উৎপাদনে সবোর্চ্চ রেকর্ড হয়েছে।

পঞ্চগড় আঞ্চলিক চা বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার ১০টি নিবন্ধিত ও ১৭টি অনিবন্ধিত চা বাগান, ৭ হাজার ৩১০টি ক্ষুদ্রায়তন চা বাগানে (নিবন্ধিত ১ হাজার ৫১০টি) মোট ১০ হাজার ১৭০ দশমিক ৫৭ একর জমিতে চা চাষ হয়েছে। এসব চা বাগানসমূহ থেকে ২০২০ সালে ৫ কোটি ১২ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৮৬ কেজি সবুজ চা পাতা উত্তোলন করা হয়েছে। যা থেকে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এর ১৮টি চলমান চা কারখানায় ১ কোটি ৩ লক্ষ কেজি চা উৎপন্ন হয়েছে।

বিগত বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ১ হাজার ৪৮৯ দশমিক ৮৯ একর চা আবাদী বৃদ্ধি পেয়েছে ও ৭ দশমিক ১১ লক্ষ কেজি চা বেশি উৎপন্ন হয়েছে।

পঞ্চগড় চা বোর্ডের আঞ্চলিক অফিস জানায়, পঞ্চগড় জেলায় ১৮টি কারখানা চা উৎপাদন করছে। ঠাকুরগাও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলার কাঁচা চা পাতাও এসব কারখানায় নিয়ে আসা হয়। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব কারখানায় চা উৎপাদন হয়েছে। এরপর থেকে চা পাতা উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে চা উৎপাদন মৌসুম শুরু হবে।

পঞ্চগড়ের মৈত্রী টি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোজাহিদুল হান্নান নিপুন জানান, পঞ্চগড়ের মৈত্রী টি ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড চা কারখানা এবার উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চা উৎপাদন করেছে। এ চা কারখানা ২৫ লাখ ১২ হাজার ৪৭৯ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে। পঞ্চগড় জেলার ৪ ভাগের ১ ভাগ চা এই কারখানা থেকে উৎপাদন হয়েছে।

পঞ্চগড়স্থ বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও নর্দান বাংলাদেশ প্রকল্পের পরিচালক ড. মোহাম্মদ শামীম আল মামুন জানান, সমতল ভূমিতে চা চাষের জন্য পঞ্চগড় ও এর পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এলাকা। দিন দিন উত্তরাঞ্চলে চা চাষ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চা চাষ সম্প্রসারণের জন্য চাষিদের বিভিন্ন সহায়তার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। চাষিদের সল্পমূল্যে উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। চাষিদের নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ‘ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলে’ হাতে কলমে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, চাষিদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে ইতিমধ্যে ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা হয়েছে। এ আঞ্চলিক কার্যালয়ে একটি পেস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে চা চাষিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান, চাষের নানা রোগবালাই ও পোকা দমনে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সহায়তা দেওয়া হয়। এ বছর ক্ষুদ্র চাষিরা তাদের বাগানের উৎপাদিত কাঁচা পাতার ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় তারা চা চাষে উৎসাহিত হয়েছে। চা বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী বাগানের যত্ন নিয়েছে।

শামীম আল মামুন জানান, পাতার দাম ভাল পাওয়ায় নতুন নতুন চা আবাদীও বাড়ছে। এতে উত্তরাঞ্চলের জেলা সমূহের মানুষের যেমন একদিকে দারিদ্র বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে তেমনি প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কোভিড পরিস্থিতিতেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলামের ব্যবস্থাপনায় উত্তরবঙ্গের সকল চা বাগানের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চা বাগান পরিচর্যা ও পাতা তোলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। এর ফলে ২০২০ সালে চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। ক্যামেলিয়া খোলা আকাশ স্কুলের মাধ্যমে চা আবাদ বিষয়ে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান এবং আধুনিক প্রযুক্তি সরবরাহের ফলে সমতলের চা বাগান ও ক্ষুদ্রায়তন চা বাগান থেকে ২০২০ সালে রেকর্ড পরিমাণ চা উৎপাদন সম্ভব হয়েছে।