মস্কোয় পা রাখামাত্র আটক নাভালনি

প্রকাশিত: ৬:৪০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৮, ২০২১

সময় সংবাদ ডেস্কঃ বিষপ্রয়োগে হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে যাওয়া পুতিন সরকারের কড়া সমালোচক আলেক্সেই নাভালনিকে আটক করেছে রাশিয়া। তিনি পাঁচ মাস জার্মানিতে কাটিয়ে মস্কো ফেরার সাথে সাথেই তাকে আটক করা হয়।

তাকে অভ্যর্থনা জানাতে মস্কো বিমানবন্দরে হাজার হাজার সমর্থক জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু বিমানবন্দরে নামার আগেই তাকে বহনকারী বিমানটির পথ পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয় শেরেমেতেইয়েভো বিমানবন্দরে।

সেখানে ইমিগ্রেশনে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায় ৪৪ বছর বয়সী এই আন্দোলনকারীকে।

নাভালনি তাকে হত্যাচেষ্টার জন্য রুশ কর্তৃপক্ষকে সবসময় দায়ী করে এলেও ক্রেমলিন বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে।

যাইহোক, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের তদন্তে নাভালনির দাবিই সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন বিষয়ে তাকে সাবধান করা হলেও তিনি বিমানে উঠেছিলেন।

তিনি যে বিমানে করে মস্কো আসছিলেন সেটি ভর্তি ছিল সাংবাদিক। বিবিসির রাশিয়ান সার্ভিসের একজন সংবাদদাতাও ছিলেন।

বিমানটি অবতরণের মাত্র কিছুক্ষণ আগে পাইলট ঘোষণা দেন যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটির পথ পরিবর্তন করে শেরেমেতেইয়েভো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আটক হওয়ার কয়েক মিনিট আগে তিনি বলেন, “আমি কিছু ভয় পাই না।”
বিমান থেকে নামার পর অপেক্ষমাণ বর্ডার গার্ডদের তিনি বলছিলেন, “আমার জন্য কি আপনারা অপেক্ষা করছেন?”

এক ভিডিওতে দেখা গেছে তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার আগে স্ত্রী ইউলিয়াকে বিদায় জানাচ্ছেন তিনি।

তাকে মস্কোতে একটি পুলিশ স্টেশনে আটক রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

এক বিবৃতিতে রাশিয়ার কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে তিনি বারবার প্রবেশন ভঙ্গ করেছেন। সেজন্য তার বিরুদ্ধে ডিসেম্বর থেকে হুলিয়া জারি রয়েছে।

গত বছর আগস্ট মাসে সাইবেরিয়া যাওয়ার পথে এক বিমানযাত্রীর সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচিত নাভালনি।

চিকিৎসার জন্য বিমান জরুরি অবতরণ করে জার্মানির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

সেখানে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন জার্মান সরকার জানায় তাকে নভিচক নামে স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত এক রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছে।

নাভালনি তাকে হত্যা চেষ্টার জন্য ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করে আসছেন।

বিষপ্রয়োগে হত্যা চেষ্টা থেকে বেঁচে, লম্বা সময় জার্মানির হাসপাতালে কাটিয়ে সুস্থ হয়ে রাশিয়াতে ফিরেতেই গ্রেফতার করা হল আলেক্সেই নাভালনিকে।

তার গ্রেফতার হওয়ার খবরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স ও ইতালির পক্ষ থেকে অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেন যাকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবেন বলে চূড়ান্ত করেছেন সেই জ্যাক সালিভান পুরো বিষয়টিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন।

দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি রাশিয়াতে সংস্কারের জন্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন নাভালনি।

এর আগে বারবার গ্রেফতার হয়েছেন তিনি। ২০১৯ সালে তিনি ভুগেছেন অদ্ভুত এক অ্যালার্জির সমস্যায়।

গত জুন মাসে ভ্লাদিমির পুতিনের আনা সাংবিধানিক সংস্কারের ভোটকে তিনি “অভ্যুত্থান” বলে বর্ণনা করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, ওই সংস্কার “সংবিধানের লঙ্ঘন”।

ওই সংস্কারের ফলে পুতিন আরো দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকতে পারবেন।

নাভালনি ভ্লাদিমির পুতিনের অধীনে প্রেসিডেন্ট ব্যবস্থাকে “রাশিয়ার রক্তকে চুষে খাওয়ার” সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।