আমরা জঙ্গিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে চাই: আইজিপি

প্রকাশিত: ১০:৫৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৭, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও সফলভাবে জঙ্গিবাদ প্রতিহত করেছে। আমরা জঙ্গিবাদের শিকড় উপড়ে ফেলতে চাই। বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের থাবা থেকে মুক্ত রাখতে বাংলাদেশ পুলিশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
রোববার দুপুরে রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটরিয়ামে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) আয়োজিত উগ্রবাদী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক ওভিসি ও টিভিসি লঞ্চিং প্রোগ্রামে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেন।

আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদীরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে ক্ষতবিক্ষত করতে অপচেষ্টা চালিয়েছিল। হলি আর্টিজানের মর্মান্তিক ঘটনা আমাদেরকে নাড়া দিয়েছে। দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে আমরা তাদেরকে প্রতিহত করেছি। এ দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ কখনো রক্তপাত পছন্দ করেন না। তারা কখনো এ দেশে জঙ্গিবাদীদের কার্যক্রম সফল হতে দেয়নি।

তিনি বলেন, ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। এর নামে অশান্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। ইসলাম ধর্মের সঙ্গে জঙ্গিবাদ যায় না।

তরুণদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, কেউ যদি আপনাদের জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করতে চায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান। আমাদের জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিরা তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে, মানুষকে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে। এজন্য পুলিশ প্রতিনিয়ত সোশ্যাল মিডিয়ায় সাইবার পেট্রোলিং করছে।

তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, সর্বশেষ জঙ্গি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের চলমান যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে।

এটিইউ’র ওভিসি ও টিভিসি নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আইজিপি বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে এটিইউ একটি নতুন ইউনিট। নবগঠিত এ ইউনিটটি সারা দেশে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সফলতার সঙ্গে কাজ করছে।

তিনি বলেন, আমরা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যত বেশি মানুষকে সচেতন করতে পারব, ততই আমরা সফল হব। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গিবাদবিরোধী তৎপরতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্যকারীদের ‘নৈরাশ্যবাদী’ আখ্যা দিয়ে তাদের মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ উগ্রবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও এদেশের একদল মানুষ কোনো কিছুতেই মঙ্গল খুঁজে পায় না। তাদের মধ্যে এক ধরনের নৈরাশ্যবাদ কাজ করে।

জঙ্গিবাদে জড়ানো কয়েকজনের গত বৃহস্পতিবার আত্মসমর্পণের প্রসঙ্গ এনে বেনজীর আহমেদ বলেন, ওই অনুষ্ঠানের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একদল লোক নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকে। তাদের ভাষ্যমতে ‘বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদী কার্যক্রম নেই, তাহলে কোথা থেকে এসব জঙ্গিরা এলো?’ তার মানে এ ধরনের লোকদের খুশি করার জন্য দেশটাকে আগে রক্তাক্ত করতে দিতে হবে। তারপর জঙ্গি ধরতে হবে। ব্যাপারটা অনেকটাই ‘কাদম্বরী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই’- বিষয়টির মতো দাঁড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যদি প্রতি সপ্তাহে, প্রতিমাসে জঙ্গিদের না ধরতাম, তাহলে ঠিকই জঙ্গি দেখতে পেতেন।

অনুষ্ঠানে অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত আইজি কামরুল আহসান স্বাগত বক্তব্য দেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামান। এছাড়া অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত আইজি (এএ্যান্ডও) ড. মইনুর চৌধুরী, পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর ড. মোহাম্মদ নাজিবুর রহমান, ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামসহ বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি এবং ঢাকা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানরাসহ অন্যান্য অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

এটিইউ প্রধান কামরুল আহসান বলেন, একটি নবগঠিত ইউনিট হিসেবে দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ দমনে এটিইউ কাজ করছে। ইতোমধ্যেই ইউনিটটি দৃশ্যমান সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তিনি জঙ্গিবাদ দমনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।