আ.লীগ প্রার্থীর পথসভায় গুলিবর্ষণ-বোমা হামলা

প্রকাশিত: ৯:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীর সমর্থকরা ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছেন।
গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে পৌর সদরের তালতলা বাজারে আওয়ামীলীগ মেয়রপ্রার্থী শহিদুজ্জামান শহিদের পথসভায় গুলি ও বোমা হামলা চালান তারা।

এ সময় আওয়ামীলীগ প্রার্থীর নির্বাচনি এবং ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগেরও ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও তালতলা বাজারে শতাধিক দোকানপাট ভাঙচুর এবং লুট করা হয়েছে। মুক্তারের সমর্থকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আওয়ামীলীগ প্রার্থী শাহিদের ভাগ্নে তুষার (২৮) আহত হয়েছেন। তাকে সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর রাত ১২টা পর্যন্ত তালতলা বাজারের উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে দুই প্রার্থীর প্রায় তিন হাজার সমর্থক সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান করছিলেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ আসলে সমর্থকরা নিজেদের অবস্থান ত্যাগ করেন। এরপর থেকে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আবারও রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে এ ঘটনায় বিদ্রোহী প্রার্থী মেয়র মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী শাহিদের পথসভার প্রায় শেষ মুহূর্তে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন সশস্ত্র সমর্থক আকস্মিক হামলা চালান। এসময় মুক্তার আলীসহ তার সমর্থকরা গুলিবর্ষণ শুরু করেন এবং বোমা হামলা চালান। প্রাণের ভয়ে এসময় শাহিদের সমর্থকরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

এরপর মুক্তার মাইকিং করে তার সমর্থকদের ডাকেন। শাহিদসহ উপস্থিত নেতাকর্মীরা আবার সংগঠিত হয়ে মুক্তারের সমর্থকদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। এসময় মুক্তারের প্রায় পাঁচ শতাধিক সমর্থক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এদের মধ্যে সশস্ত্র কয়েকজন সমর্থক গুলিবর্ষণ শুরু করে ও বোমা হামলা চালায়। দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে শাহিদের সমর্থকদের তাড়া করে। মুক্তারের সমর্থকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এসময় শাহিদের ভাগ্নে তুষার আহত হন। একপর্যায়ে মুক্তারের সমর্থকরা সেখানে নৌকা প্রার্থীরা নির্বাচনী কার্যালয় এবং মেয়র প্রার্থী শাহিদের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। এছাড়া শতাধিক দোকানে লুট এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়।

রাতে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ওই এলাকার নিয়োন্ত্রন নিয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান-, বুধবার রাতে আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী শহিদুজ্জামান শহিদের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতি বাদি হয়ে বাঘা থানায় বিস্ফোরক আইনে মামল দায়ের করেন।

তিনি আরো জানান, মামলায় বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র মুক্তার আলীকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছ। এছাড়া এই মামলায় ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞত আরো ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় আড়ানীর সাহাপুর এলাকার সাহাবাজ আলীর ছেলে মিলনকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, মুক্তার বর্তমানে আড়ানী পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। এবারও তিনি আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ কারণে তাকে আড়ানী পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অপসারণ এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।