প্রথম ধাপে টিকা পাবেন ৮ দশমিক ৬৮ শংতাশ মানুষ

প্রকাশিত: ১১:২৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২১

অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষের নিরাপত্তা দিতে প্রথম ধাপেই পর্যায়ক্রমে ৬৪ জেলায় টিকা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কোন জেলায় কতজন প্রাথমিক পর্যায়ে টিকা পাবেন তার একটি সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জনসংখ্যার ঘনত্ব, সংক্রমণের হার ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। মোট বরাদ্দ তালিকায় সবচেয়ে বেশি টিকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে ঢাকা জেলায় ১২ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ ডোজ।

আগামী ২২ থেকে ২৫ জানুয়ারি দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা আসবেÑ এমনটি জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সোমবার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, প্রথম ধাপে ৫০ লাখ টিকা আসবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে। ফেব্রæয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকেই সারাদেশে প্রথম ধাপের টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। এই টিকাদান কর্মসূচিতে টিকা পাবেন দেশের ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ মানুষ।

এদিকে ভারতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জাইশঙ্কর মঙ্গলবার বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে করোনভাইরাস ভ্যাকসিনের রপ্তানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দেশটি। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম রয়টার্সে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাইশঙ্কর বলেন, আমরা ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কি ধরনের অবদান রাখব সেটি দ্রæতই প্রকাশ করা হবে।

এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে টিকা দানের জন্য প্রশিক্ষিত জনবল প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রশিক্ষণ সহায়িকা চ‚ড়ান্ত খসড়া করা হয়েছে। পাশপাশি অনলাইন প্রশিক্ষণ, মাঠ পর্যায়ের প্রশিক্ষণ ও বাজেট চ‚ড়ান্তকরণ, স্বেচ্ছাসেবক প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা তৈরি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ১৮ জানুয়ারির মধ্যে এগুলো সব জেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আগামী ১৮ থেকে ১৯ জানুয়ারি টিকা দেওয়ার বিষয়ে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের (ডেপুটি সিভিল সার্জন, ইউএইচএফপিও) প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। সিটি করপোরেশন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ হবে ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি এবং টিকাদান কর্মীদের প্রশিক্ষণ চলবে ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি। বিভিন্ন পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবকদের ওরিয়েনটেশন হবে ২৬ ও ২৭ জানুয়ারি।

যেসব স্থান থেকে টিকা দেওয়া হবে তার মধ্যে রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা/সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল। এসব জায়গায় প্রথম ধাপের ৫০ লাখ ভ্যাকসিন দিতে ইতোমধ্যে ৭ হাজার ৩৪৪টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলে দুজন সরাসরি ভ্যাকসিন দেবেন এবং বাকি ৪ জন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অন্যান্য কাজ করবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডিস্ট্রিবিউশন প্লানে দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে টিকা দেওয়া হবে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৪ জনকে। চট্টগ্রামে বিভাগে দেওয়া হবে ২৯ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৩ জনকে, ঢাকা বিভাগে দেওয়া হবে ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ৫৪৫ জনকে। খুলনা বিভাগে দেওয়া হবে ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৬ জনকে। রাজশাহী বিভাগে দেওয়া হবে ১৯ লাখ ২৪ হাজার ৯২২ জনকে। রংপুর বিভাগে দেওয়া হবে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৯ জনকে। সিলেট বিভাগে দেওয়া হবে ১০ লাখ ৩২ হাজার একজনকে। তিনটি রাউন্ডে এই জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ’র লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে টিকা পৌঁছবে ২৭ জানুয়ারি। টিকা পাওয়ার পর কয়েকটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের পরীক্ষামূলকভাবে দেওয়া হবে। তার এক সপ্তাহ পর, মাঠ পর্যায়ে টিকা দেওয়া শুরু হবে ফেব্রæয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তালিকাভুক্ত জনগোষ্ঠীকে ৮ সপ্তাহ ব্যবধানে (১ম ডোজের ৮ সপ্তাহ পর ২য় ডোজ) টিকা দেওয়া হবে। প্রথম ধাপেই টিকা পাবেন কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসাবে কর্মরত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের। তারপর পর্যায়ক্রমে পাবে অন্য সবাই।

প্রসঙ্গত, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের তিন কোটি ডোজ পাওয়ার জন্য গত ৫ নভেম্বর সেরাম ইনস্টিটিউট এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুসারে প্রথম ধাপে প্রত্যেক মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা। এ মাসেই যার প্রথম চালান আসছে।