‘ব্রকলি’ চাষ বাড়ছে শ্রীমঙ্গলে

প্রকাশিত: ৫:১৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক ; চারিদিকে সবুজের সমারোহ। দূর থেকে দেখলে মনে হবে ফুলকপির মাঠ। আসলে সেটি সবুজ বর্ণের ফুলকপি পরিবারের সবজি ব্রকলি। অধিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় এ বিদেশি জাতের সবজি ‘ব্রকলি’ চাষ দিন দিন বাড়ছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।
গত বছর এই উন্নত জাতের সবজি ‘ব্রকলি’ চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন এখানকার কৃষকরা।

ভালো ফলন ও বাজারে অধিক মূল্য পাওয়ায় এবার অনেকেই ব্রকলি চাষে আশার আলো দেখছেন।

তবে চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও অভিজাত হোটেলগুলো যদি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ব্রকলি ক্রয় করতো তাহলে তারা উপযুক্ত দাম পেতেন, এমনটাই বলছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভৈরবগঞ্জ বাজার, টিকরিয়া, মন্দিরগাঁও, আশিদ্রোণ ও সিঁদুরখাঁন ইউনিয়নসহ অনেক গ্রামে এবার ব্যাপক হারে চাষ হচ্ছে উন্নত জাতের এ ব্রকলি।

কৃষকরা জানান, গত বছর বিদেশি জাতের সবজি ব্রকলি চাষ করে সাফল্য পেয়েছিলেন। নতুন জাতের সবজিতে জনসাধারণের আগ্রহ থাকায় অধিক মুনাফাও করেছিলেন। এবার অনেকেই ব্রকলি চাষ করে আশার আলো দেখছেন।

কৃষকরা বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোপণ করা হয় ব্রকলির চারা। নিবির পরিচর্যার পর আড়াই মাসেই ফুল ধরে। এই ফুলই ব্রকলি।

জানা যায়, ব্রকলি ক্রসিফেরী গোত্রের অন্তর্ভুক্ত শীতকালীন সবজি। এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট, আঁশ আছে। ব্রকলিতে রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। এটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ভিটামিন সি থাকায় এটি ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস হওয়ায় এটি হাড় মজবুত করে। ব্রকলি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভালো উৎস। এটি ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং কোলোস্টেরলের মাত্রা কমাতে ব্রকলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একই ইউনিয়নের কৃষক সোলেমানিয়া বলেন, ৯০ শতক জমিতে পর্যায়ক্রমে ‘ব্রকলি’ চাষ করছি। উপযুক্ত দাম ও বাজারজাতকরণের সুবিধা পেলে ব্রকলি একটি লাভজনক সবজি হবে। যা আমরা আগামী সিজনে আরও ব্যাপক হারে চাষ করতে পারবো।

এছাড়াও উপজেলার ভৈরব বাজার এলাকার কৃষক শামিম মিয়াও তার ৩০ শতক জমিতে আর্লি ইউ জাতের ব্রকলি চাষ করছেন। তিনি বলেন, যদি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও অভিজাত হোটেলগুলো সরাসরি আমাদের মাঠ থেকে থেকে ‘ব্রকলি’ ক্রয় করতো তাহলে আমরা উপযুক্ত দাম পেতাম। এই উচ্চ মূল্যের সবজিটি আগামীতে ব্যাপক হারে চাষ করতে পারতাম। যা খুবই লাভজনক হতো আমাদের জন্য।

লাল তীর সীড লিমিটেডের ডিভিশনাল ম্যানেজার তাপস চক্রবর্তী বলেন, ব্রকলি ক্রসিফেরি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি কেবেজ পরিবারের আঁশ জাতীয় সবজি। এর আদি নিবাস ইতালিতে। পুষ্টিবিদদের মতে ব্রকলিতে আয়রনের পরিমাণ অধিক থাকে তাছাড়াও ৭টি পুষ্টিগুণে ভরপুর ব্রকলি। ভিটামিন-সি, বিটা ক্যারোটিন যা ক্যান্সার প্রতিরোধক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধে কার্যকরী। ত্বক সুন্দর করে ও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে।

তিনি আরও বলেন, উচ্চ মূল্যের এই সবজিটি আমরা গত বছর প্রদর্শনী আকারে কৃষক পর্যায়ে কিছু বীজ দিয়েছিলাম। যার ফলাফলে এ বছর ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এ বছর মোটামুটি ভালো চাষ হয়েছে আমাদের ব্রকলি আর্লি ইউ নামে জনপ্রিয় এই জাতটি। এটির যদি বাজারজাতকরণের উপযুক্ত সুবিধা ও কৃষক ন্যায্য দাম পায় এবং উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস আমরা সমাজে তৈরি করতে পারি তাহলে এই সবজিটি একটি লাভজনক শীতকালীন সবজিতে রূপান্তরিত হবে বলে আমরা আশা করি।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, ব্রকলি চাষ আমরা শুরু করেছি গত দুই বছর আগে। এ বছর নিয়ে ৩ বছর হয়েছে। আমাদের একটা প্রকল্প আছে “ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রজেক্ট।” এটা বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় চলছে। এর মধ্যে গ্রেজেটে উচ্চ মূল্যে সিলেট অঞ্চলে ফসল চাষ করা হচ্ছে। যেহেতু সেটা একটু আনকমন ফসল, তাই ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ ব্রকলি চাষ আমি প্রথম শুরু করেছি।

তিনি বলেন, যদিও ব্রকলি সাইজে তেমন বড় হয় না, কিন্তু দামে তো ভালো। কৃষকও অনেক লাভ করছে। এ ব্রকলি নিয়ে গত বছর আমি একটা প্রদর্শনী করেছি। এ বছরও প্রদর্শনী হবে।