জাকাতের অর্থ আত্মসাৎ: আদালতে সাঈদী, চলছে চার্জ শুনানি

প্রকাশিত: ৪:২৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) জাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের মামলায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কারাগারে থাকা জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শুনানি শুরু হয়েছে।

সোমবার (১১ জানুয়ারি) পুরান ঢাকার বকশীবাজার আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক সৈয়দা হোসনে আরার আদালতে এ চার্জ শুনানি শুরু হয়।

এদিকে চার্জ শুনানিকে কেন্দ্র করে এদিন সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে কাশিমপুর কারগার থেকে মামলার প্রধান আসামি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আদালতে আনা হয়।

গত ২৮ ডিসেম্বর আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে চার্জ গঠন শুনানির জন্য ১১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন একই আদালত।

ইদিন সাঈদীর পক্ষে আদালতে সময় আবেদন করেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার, মো. মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও মতিউর রহমান আকন্দ। তবে আদালতে সময় আবেদনের পর এর বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল ওইদিন শুনানিতে বলেন, ‘মামলা দায়েরের পর প্রায় ১০ বছর পার হয়ে গেছে। এখনও তারা কাগজপত্র সংগ্রহ করতে পারেননি। এ কথা অলীক, অবাস্তব।’

এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর একই আদালত সাঈদীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মামলার শুনানি ২৮ ডিসেম্বর এবং আয়কর ফাঁকির অভিযোগে করা মামলার শুনানি জন্য ৬ জানুয়ারি দিন ঠিক করে দেন।

আয়কর ফাঁকির মামলায় সাঈদী একমাত্র আসামি হলেও অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাঈদীসহ রয়েছে মোট ৬ আসামি। অপর ৫ আসামি হলেন- ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হক, মসজিদ কাউন্সিল ফর কমিউনিটি অ্যাডভান্সমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বন্ধুজন পরিষদের প্রধান সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস, ইসলামী সমাজ কল্যাণ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল হক।

৬ আসামির মধ্যে সাঈদী কারাগারে, আবুল কামাল আজাদ ও আব্দুল হক পলাতক এবং অপর ৩ আসামি জামিনে রয়েছেন।

ইফার যাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী ২০১০ সালের ২৪ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা দায়ের করেন। ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী।

অন্যদিকে ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা আয় গোপন করে তার ওপর প্রযোজ্য কর ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮১২ টাকা কর ফাঁকির অভিযোগে ২০১১ সালের ১৯ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মামলাটি দায়ের করে। ২০১২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মামলাটিতে সাঈদীর বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম অভিযুক্ত ব্যক্তি হিসেবে জামায়াতের নায়েবে আমির সাঈদীর বিচার শুরু হয়েছিল ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর। এর আগে থেকেই কারাগারে আছেন ৮০ বছর বয়সী সাঈদী।

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রায় পরবর্তী তিন দিনে দেশজুড়ে জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ব্যাপক সহিংসতায় অন্তত ৭০ জন নিহত হন। ভাঙচুর করা হয় বহু গাড়ি-দোকানপাট, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি-মন্দির ভাঙচুর ও জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সাঈদী আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে দেয়া রায়ে সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন। এরপর রিভিউ আবেদনেও রায়ে কোনও পরিবর্তন আসেনি।