দুর্বিষহ জীবন যন্ত্রনা : খুলনার কিশোরী মিতু’র রোগ ধরতে পারছে না চিকিৎসকরা দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ৩:২৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২১ আতিয়ার রহমান,খুলনা : এইচএসসি পড়–য়া ফারজানা আক্তার মিতুর (১৭) জীবন পার হচ্ছে দুর্বিষহ যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে। প্রতিমাসে এক বা একাধিকবার নাক মুখ চোখ ও কান দিয়ে রক্ত বের হয়। মাঝে মাঝে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অক্সিজেন দিলে তবেই একটু শান্তি পায়। বাংলাদেশ ও ভারতে চিকিৎসা করলেও রোগ ধরতে পারেনি চিকিৎসকরা। অর্থ অভাবে বর্তমানে ডাক্তার দেখানো বাদ দিয়েছেন তার দরিদ্র মা নাহার বেগম। নগরীর টুটপাড়া তালতলা হাসপাতালের পাশে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করেন মিতুর পরিবার। সংসারে মা ছাড়া আর কেউ নেই। ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল পারিবারিক কাজে বাগেরহাটে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান পিতা আল মামুন দুলাল ও ছোট ভাই মারুফ হাসান কুপ। পিতা রুপসা মাছ বাজারের পাশে একটি হোটেল চালিয়ে পরিবারের ভরণ পোষন চালাতেন। পিতার কাঁধে সংসারের দায়িত্ব থাকাকালে সুখের সীমা ছিল না পরিবারে। এক সড়ক দুর্ঘটনায় তাদের জীবনে নেমে আসে দুখের কালো মেঘ। মেয়েকে নিয়ে শুরু হয় মায়ের জীবন সংগ্রাম। বরাবরই লেখাপড়ায় ভালো মিতু সেসময় অষ্টম শ্রেনিতে পড়ত। এর আগে ক্লাশ ফাইভে বৃত্তি পায়। পিতা ও ভাইয়ের মৃত্যুর মানষিকভাবে ভেঙে পড়েন মিতু। এরপরও সরকারি স্কুলে প্রতিযোগীতা করে চান্স পায় সে। নগরীর কেডিএ খানজাহান আলী সরকারি বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ৪.৮৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। বর্তমানে সরকারি জয় বাংলা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করছেন। বিপত্তি বাঁধে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এক সন্ধ্যায় বাড়িতে বসে পড়াশোনা করছিলো মিতু। হঠাৎ অনুভব করে চোখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। চিৎকার ওঠে সে। তার মা দৌড়ে গিয়ে দেখে শুধু চোখ দিয়ে নয় নাক কান ও মুখ দিয়েও রক্ত বের হচ্ছে। রক্তের ধারা স্বাভাবিকের থেকেও বেশী। বয় পেয়ে যান মা নাহার বেগম। একমাত্র মেয়ের চিন্তার দিশেহারা হয়ে পড়েন। প্রতিবেশীদের সহায়তা নিয়ে স্থানীয় নার্সিং হোমে ভর্তি করেন। সেখানে চলে দীর্ঘ চিকিৎসা। তবে কোন পরিস্থিতির কোন উন্নয়ন হয়নি। সেখানে সকল ধরনের পীরক্ষা নীরিক্ষা করা হয়। কিন্তু কোন রোগ ধরা পড়েনি। এরপর খুলনার বড় বড় সব হাসপাতালের চিকিৎসকরা দেখেও কোন রোগের কুল কিনারা করতে পারেনি। খুলনার একাধিক চিকিৎসকের সাথে কথা বললেও তারা এ রোগের বিষয়ে কিছু বলতে পারেন নাই। মিতুর মা নাহার বেগম বলেন, মেয়ের এমন অবস্থায় আমি মানষিকভাবে ভেঙে পড়ি। তবে হাল না ছেড়ে খুলনার লিভার, মেডিসিন, গাইনী, সার্জারী বিশেষজ্ঞসহ নামকরা সব চিকিৎসককে দেখাই। কিন্তু কিছুতে কিছু হয়নি। এরপর ঢাকায় নিয়ে যাই। সেখানকার এ্যাপোলো হাসপাতালে প্রথমকে দেখাই। সেখানে বয়োপসি টেস্ট করানো হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে সলিমুল্লাহ ক্লিনিক, পপুলার হাসপাতাল, পিজি হাসপাতালেও ভর্তি করে চিকিৎসা করানো হয়। এই সময়ের মধ্যে আমার মেয়ের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গের টেষ্ট করানো হয়। তবে চিকিৎসকরা কোন রোগ ধরতে পারেনি। ইতোমধ্যে আমার সঞ্চয়ের প্রায় ৪ লাখ টাকার সবই শেষ হয়ে যায়। একদিকে নিজেদের পেট চালানো অন্যদিকে মেয়ের পড়াশোনার খরচ এবং চিকিৎসার ব্যয় সামলাতে দেনায় পড়ে যাই। পরে স্বামীর রেখে যাওয়া হোটেল ব্যবসার হাল ধরি নিজে। সেই হোটেল চালিয়ে কিছু টাকা জোগাড় করে মেয়েকে নিয়ে যাই ভারতের ভেলোরে এক নামকরা হাসপাতালে। সেখানে প্রায় দুই সপ্তাহ বিভিন্ন পরিক্ষা নীরিক্ষার পর চিকিৎসকরাও কোন রোগ ধরতে পারেনি।’ নাহার বেগম আরো বলেন, ‘মেয়ের চোখ, মুখ, নাক ও কান দিয়ে যখন রক্ত বের হয় তখন কোন ধরনের ব্যথা অনুভুত হয় না। মাঝে মাঝে চোখে চিনচিন করে ব্যাথা করে অথবা শ্বাষকষ্ট হয়। শ্বাস নিতে কষ্ট হলে তাকে হাসপাতালে নিতে হয় অক্সিজেন দেওয়ার জন্য। এ ধরনের রোগী বাংলাদেশে বিরল। আমাদের মত দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বিদেশে নিয়ে এর চিকিৎসা করানো দুরুহ ব্যাপার। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও আমি চিন্তিত। মেধাবী হলেও পড়াশোনা শেষ পর্যন্ত করাতে পারব কিনা ভেবে কুল পাচ্ছি না। একবার পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলায় মেয়ে আত্মহত্যা করতে গেছিল। এখন আর বলি না। এমন বিরল রোগের চিকিৎসার জন্য সরকারীভাবে সব ধরনের সহযোগীতা থাকা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন।’ এসব বিষয় নিয়ে মিতুর সাথে কথা হলে সে জানায়, প্রথম যখন এমন হয়েছিল তখন আমি খুবই ভয় পেয়ে গেছিলাম। এরপর থেকে স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছি। স্কুলের ক্লাশ চলাকালীন সময়েও আমার এমন হতো। প্রথম প্রথম আমার মতই সহপাঠিরা ভয় পেত। আমাকে দুরে সরিয়ে রাখত। তবে একসময় তারা আমাকে প্রচন্ডভাবে সহযোগীতা করা শুরু করে। স্যারেরাও বিভিন্নভাবে সহযোগীতা করত। বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসার জন্য অর্থ দিয়েও সহযোহীতা করে। বর্তমানে আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। আমি শুধু পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে চাই। Share this:FacebookX Related posts: নড়াইলে প্রতিবন্ধীদের মাঝে মাশরাফির পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ জীবন নিয়ে বিপাকে নরসুন্দর জীবন শিকদার ইবি শিক্ষার্থী সোহেলের বাঁচার আকুতি! বেনাপোলস্থ চট্রগ্রাম বিভাগীয় সমিতি’র উদ্যোগে এতিম শিশুদের শীতবস্ত্র বিতরণ শার্শা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ৪৯ টি ম্যান্ডাফ হাঁস উদ্ধার খুলনায় জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালিত বাগেরহাটে করোনা প্রতিরোধে অভিযান চলাচ্ছে সেনাবাহিনী মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মৎস্য আহরণ শরণখোলায় জাল ও মাছসহ ট্রলার আটক খুলনায় যত্রতত্র পার্কিংয়ে দুর্ভোগ : বেহাল কেডিএ’র সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল সাতক্ষীরার সীমান্তে ১০ পিস স্বর্ণের বারসহ চোরাকারবারী আটক শার্শা উপজেলায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই বিতরণ SHARES Matched Content খুলনা বিভাগ বিষয়: খুলনার কিশোরীচিকিৎসকরাদুর্বিষহ জীবন যন্ত্রনামিতু’র রোগ ধরতে পারছে না