পঞ্চগড়ে নিখোঁজের ৫ দিন পর কলেজ ছাত্রের লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১:০৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১০, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় ফাহিদ হাসান সিফাত (১৮) নামে এক কলেজ ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। নিখোঁজের ৫ দিন পর তার লাশ উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১৩।

শনিবার (৯ জানুয়ারি) আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ছোটদাপ এলাকায় নিহতের বাড়ির ২০০ গজ উত্তরে একটি ক্ষেতের মাটির নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সিফাত ওই এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে এবং দিনাজপুর আদর্শ কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

এ ঘটনায় র‌্যাব-১৩ একই এলাকার মোখলেছার রহমানের ছেলে পঞ্চগড় এম আর সরকারি কলেজের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র মতিউর রহমান মতিকে (২১) গ্রেফতার করেছে।

আটককৃতরা হলেন-মতির বাবা মোখলেছার রহমান, মা ময়না বেগম ও মতিউরের চাচাতো ভাই লিমন। এ ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তার বাবা মাসহ পরিবারের লোকজন।

জানা গেছে, গত ৩ জানুয়ারি সিফাত দিনাজপুর থেকে বাসায় আসে। গত ৪ জানুয়ারি রাত ৮টায় সিফাততে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য বাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে যায় মতিউর। পরে সিফাতের বাবা মা তাকে না পেয়ে ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আটোয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। তারপরেও সিফাতকে না পাওয়ায় তার বাবা গত ৮ জানুয়ারি র‌্যাবের দারস্থ হলে উদ্ধার অভিযানে নামে র‌্যাব-১৩। র‌্যাব সন্দেহজনকভাবে মতিউরকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী র‌্যাবের ১৮ ঘন্টার প্রচেষ্টার পরে শনিবার দুপুরে মাটি খুড়ে সিফাতের মরদেহ উদ্ধার করে র‌্যাব।

এসময় র‌্যাব- ১৩ এর সিনিয়র এসপি মো. মুন্না বিশ্বাস, পিবিআই ঠাকুরগাঁও এর এএসপি এবিএম রেজাউল ইসলাম, পঞ্চগড় পুলিশের সদর সার্কেল সুদর্শন রায়, আটোয়ারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুল ইসলাম, রাধানগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবু জাহেদ, পঞ্চগড় ডিবি ইন্সেপেক্টর জয়ন্ত কুমার শাহ, সিআইডি ঠাকুরগাঁও এর প্রতিনিধি এসআই মো. মহিদুল ইসলামসহ হাজার হাজার এলাকাবাসি উপস্থিত ছিলেন।

র‌্যাব জানায়, নির্জনে ডেকে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। পরে সিফাতের ফোন থেকেই তার বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ চায় হত্যাকারী। নানা নাটকীয়তার পর র‌্যাবের জালে ধরা পড়ে হত্যাকারী সিফাতেরই প্রতিবেশি চাচাত ভাই মতিউর রহমান মতি (২১)। বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে মতি। হত্যার আগেই গর্ত করে রাখে। পরে সেই গর্তেই লাশ মাটি চাপা দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করে এই যুবক। তার দেয়া তথ্য মতে শনিবার লাশ উদ্ধার করা হয়।

সিফাতের বাবা সফিকুল ইসলাম জানান, আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। সিফাত সবার বড়। গত ৩ জানুয়ারী সিফাত দিনাজপুর থেকে বাসায় আসে। সে সেখানে দিনাজপুর আদর্শ কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ালেখা করতো। কিছুদিন ধরে সিফাত দিনাজপুরে কোচিং করছিল। গত ৪ জানুয়ারি সে নিখোঁজ হয়। সিফাতকে খুঁজে না পেয়ে ৫ জানুয়ারি আটোয়ারী থানায় সাধারণ ডারেয়ি করি। ওই দিন সন্ধ্যাতেই হত্যাকারী সিফাতের ফোন থেকে তার বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মুক্তিপণের জন্য এক লাখ টাকা দিতেও রাজি হই। তার কথা মত ৮ হাজার টাকাও পাঠাই। ১৪ দিন পরে ছেলেকে ফেরত দিবে বলে সে জানায়। আটোয়ারী থানা পুলিশে জিডির পর সিফাতের কোন সন্ধ্যান বের করতে না পারায় পরে র‌্যাবের কাছে যাই। কেন কি কারণে আমার ছেলেকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চান তিনি।

সিফাতের মা শারমিনা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে ছেলে হত্যার বিচার চান। যারা যারা এ হত্যাকান্ডে জড়িত তাদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি। যাতে করে আর কেউ এধরনের হত্যাকান্ড ঘটানোর সাহস না পায়।

র‌্যাব-১৩ রংপুরের অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস জানান, অভিযোগের পর পরই আমরা অভিযানে নেমেছি। মোবাইল ট্র্যাকিংসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা মতিউরকে আটক করি। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জানা যায় সে সিফাতকে হত্যা করে মাটিতে পুতে রেখেছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। সে একাই এই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করলেও তদন্তে বিস্তারিত জানা যাবে। ময়নাতদন্তসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা তার লাশ আটোয়ারী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কোদাল ও হত্যাকারীর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

আটোয়ারী থানার ওসি মো. ইজারউদ্দীন জানান, সিফাতের লাশ আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মতিউরকে গ্রেফতার ও তার বাবা মাসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটোয়ারী থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।