অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে: ক্ষমতাধর ১০০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২১

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ দেশের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলাদেশ। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের করা ১৯০টি দেশের এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৮১তম।

জরিপে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের স্কোর ৬১ দশমিক ৬৭। গত ১৯ অক্টোবর থেকে ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত গেস্নাবাল বিজনেস পলিসি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে এ জরিপ পরিচালনা করেছে সিইওওয়ার্ল্ড সাময়িকী। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য, সর্বোচ্চ ৯৮ দশমিক ০৯ স্কোর নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। এরপর রয়েছে যথাক্রমে রাশিয়া, ভারত ও ফ্রান্সের নাম। তালিকার ছয় নম্বরে রয়েছে জার্মানি। সাত নম্বরে রয়েছে জাপান। এরপরের অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরাইল। আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তালিকায় বাংলাদেশের ওপরে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে ভারতের অবস্থান চতুর্থ, পাকিস্তান ৩৭তম এবং শ্রীলঙ্কা ৮০তম।

লক্ষণীয়, সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনেরর্ যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে মানদন্ড হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রভাব, প্রতিরক্ষা বাজেট, দেশের অস্ত্র, বৈশ্বিক জোট, সফট পাওয়ার ও সামরিক শক্তির মতো বিষয়গুলোকে। আমরা মনে করি, যখন বাংলাদেশ এইর্ যাংকিংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ দেশের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে, তখন তা আমলে নিয়ে মানদন্ডগুলো বিবেচনায় রেখে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ অর্থনীতিসহ নানা দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ধরনের বৈশ্বিক সূচকেও দেশ এগিয়েছে। যখন করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত, তখনও বাংলাদেশ কিছুটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, রিজার্ভসহ নানা দিক থেকেই দেশ ইতিবাচক ধারায় যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক।

কিন্তু সংশ্লিষ্টদের এটাও মনে রাখা দরকার, দেশের সুশাসন এবং দুর্নীতির বিষয়টি বারবার আলোচনায় এসেছে। সরকারি-বেসরকারি নানা ধরনের খাতে দুর্নীতি মহোৎসব চলছে এমন খবরও বিভিন্ন সময়েই প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ দেশের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলাদেশ- এ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে দেশকে আরও অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিতে হবে। এ লক্ষ্য সুশাসন নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, করোনার ধাক্কায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতির মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তালিকার প্রথম স্থান ধরে রেখেছে তারও একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে সিইওওয়ার্ল্ড। ম্যাগাজিনটি বলছে, করোনায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এটি এখনো শক্তিশালী। এছাড়া সামরিকভাবে এখনো যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে অগ্রসর। মূলত এসব বিষয়ই দেশটিকে শীর্ষস্থান ধরে রাখতে সহায়তা করেছে। তবে সিইওওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে করোনার ধাক্কাসহ যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিক্ষয়ের বিষয়টি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের সর্বাত্মক পদক্ষেপ জারি রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত বলা দরকার, এর আগে এমন বিষয় জানা গেছে, ২০৩৩ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) তাদের সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে এই পূর্বাভাস দেয়। আবার এখন যখন জানা গেল, দেশ বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ দেশের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে- তখন এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় পরিলক্ষিত হয়, দেশ ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, অগ্রগতি ধরে রাখতে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার পাশাপাশি যেসব প্রতিবন্ধকতা আছে তা আমলে নিতে হবে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

সর্বোপরি বলতে চাই, বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ১০০ দেশের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলাদেশ- এটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়ার দরকার, মানদন্ডগুলো বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। একই সঙ্গে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করা। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।