কঠোর তদারকির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে হবে

প্রকাশিত: ৯:৫৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৮, ২০২১

করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জরুরি ও প্রয়োজনীয় ১০ ধরনের পরীক্ষার মূল্য নির্ধারণ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংবাদটি ইতিবাচক। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে দেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো এসব পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি টাকা আদায় করছিল।

অবশ্য বেশকিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই সরকারের বেঁধে দেয়া দামের চেয়েও কম মূল্যে পরীক্ষা করছে, যাদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই নতুন মূল্যহার প্রযোজ্য হবে না। তবে সরকারি হাসপাতালগুলোয় এসব পরীক্ষার ব্যয় আরো কম। তাই সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মূল্য নির্ধারণ করা হলে তা জনস্বার্থ রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। অভিযোগ উঠেছে, এ ক্ষেত্রে জনসাধারণের স্বার্থের চেয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থকে অধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বস্তুত বেশকিছু পরীক্ষার মূল্যহার বেশিরভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রচলিত সেবা মূল্যের চেয়ে অধিক ধরা হয়েছে, যা সমন্বয় করা প্রয়োজন। পাশাপাশি যেসব সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে, সেখানে এসব পরীক্ষা বিনামূল্যে সম্পন্ন করার পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, যাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়। সরকার একটি প্রণোদনার মাধ্যমে এ ব্যবস্থা নিতে পারে।

এর আগে দেশে কোভিড-১৯ রোগীর উল্লম্ফন ঘটায় সরকার ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবকে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও সেবা প্রদানের অনুমতি প্রদান করেছিল। সে সময় দেখা গেছে, বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতাল সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়মনীতি মানছে না। এমনকি তালিকাভুক্ত অনেক হাসপাতালের লাইসেন্স পর্যন্ত নবায়ন করা ছিল না। কেউ কেউ ‘পিসিআর’ পরীক্ষার অনুমোদন নিলেও এজন্য প্রয়োজনীয় মেশিন ও সরঞ্জামের ঘাটতি ছিল তাদের। আবার অনুমোদন ছাড়াই অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কাজ করছিল কিছু হাসপাতাল এবং এ বাবদ রোগীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছিল।

একপর্যায়ে রাজধানীর উত্তরায় রিজেন্ট হাসপাতালে করোনা পরীক্ষায় ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ায় রোগী ও স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। বস্তুত এসব কর্মকা- দেখে মনে হচ্ছিল- কোভিড-১৯ চিকিৎসার নামে পুরো বিষয়টিকে যেন খামখেয়ালি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ সবকিছুই ঘটেছিল সুষ্ঠু তদারকি ও জবাবদিহিতার অভাবে। কোভিড-১৯ সম্পর্কিত জরুরি ও প্রয়োজনীয় ১০ ধরনের পরীক্ষার জন্য বেঁধে দেয়া মূল্যহার নিয়ে এমনটি যেন না ঘটে এবং হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো যাতে বেশি অর্থ আদায় করতে না পারে- এ ব্যাপারে শুরুতেই যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।

এ সত্য অস্বীকার করার উপায় নেই- শুরু থেকেই দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় এক ধরনের সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য করা গেছে, যা সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরো প্রকট রূপ ধারণ করেছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। আমাদের এখানে ভাইরাসটি প্রতিহত করতে ইতোমধ্যে সরকারিভাবে অনেক পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে একই সমান্তরালে কোভিড-১৯ চিকিৎসা ও নমুনা পরীক্ষার জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত বেশকিছু বেসরকারি হাসপাতালে বিভিন্ন অনিয়ম-প্রতারণা, এমনকি অনেক সরকারি হাসপাতালেও করোনা চিকিৎসায় অব্যবস্থাপনার চিত্র প্রত্যক্ষ করে দেশবাসী বিপন্নবোধ করেছে, যা নিরসনে সরকারের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা দরকার। ঘনবসতি, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে অসচেতনতা, ভারসাম্যহীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশকে করোনাভাইরাস মহামারীর সবচেয়ে খারাপ প্রভাবের ঝুঁকিতে ফেলেছে। এ ঝুঁকি মোকাবিলায় সুসমন্বিত সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম ও পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি।