​তিস্তার চরে সালিশ বৈঠকে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ৬:১৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৬, ২০২১

নিউজ ডেস্কঃ রংপুরের হারাগাছ এলাকার এক ব্যক্তির পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে আব্দুল হালিম সরকার (৫৮) নামে এক ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। মঙ্গলবার রাতে হারাগাছ থানা সীমান্ত তিস্তা নদীর চর লালমনিরহাটের মিলনবাজার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত আব্দুল হালিম সরকার কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভার পাইকারটারী গ্রামের মৃত ছমছ উদ্দিনের ছেলে এবং মালা বিড়ি ফ্যাক্টরির মালিক।

নিহতের পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হারাগাছ থানার সীমান্তবর্তী লালমনিরহাটের তিস্তার চর মিলনবাজার এলাকার মজিবরের কাছে তামাক বিক্রির ১৩ লাখ টাকা দেড় বছর ধরে পাওনা ছিল হারাগাছ দর্জিপাড়া গ্রামের চান মিয়া। প্রায় দেড়মাস আগে এ নিয়ে একবার বৈঠক হয়। সেখানে ৫ জানুয়ারি রাতে টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন মজিবর। সে অনুযায়ী লিখিত অঙ্গীকারনামাও তৈরি করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সেই টাকা আদায়ের জন্য চান মিয়া আব্দুল হালিম সরকার ও মোনায়েম হাজীকে সঙ্গে নিয়ে হারাগাছ টাংরীর বাজারে গেলে লালমনিরহাটের মিলন বাজার এলাকার সন্ত্রাসী মজিবর ও তার ভাড়া করা বালু দস্যু ফজলু, এলফাট, রতন, ফজু এবং আরো ২০-২৫ জন উশৃঙ্খল যুবক তাদেরকে ধরে নিয়ে মজিবরের বাড়িতে বৈঠকে বসেন। সেখানে বৈঠক চলাকালে সন্ত্রাসীরা ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম সরকারকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করেন । এরপর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মুমুর্ষ অবস্থায় হালিমকে উদ্ধার করে পরিবারের সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে হারাগাজ পৌর এলাকার পকিহাটা ব্রিজের সামনে পৌছে মারা যান হালিম।

নিহতের ছেলে মোহন মিয়া জানান, মঙ্গলবার রাতে মজিবরের বাড়িতে সালিশ বৈঠক বসেছিল। বিরোধ মেটাতে সেখানে তার বাবাও ছিলেন। বৈঠকে তার বাবার তোলা একটি প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে হট্টগোল শুরু হলে সন্ত্রাসী মজিবর ও ফজলু সহ তার লোকজনেরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। মোহন মিয়া বলেন, আমি অন্যের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওখানকার গ্রামবাসীকে অনেক অনুরোধ করেছি। কিন্তু হট্টগোল শুরু হলে মজিবর, ফজলু, ফজলু ও এলফাট সহ অনেকে আমার বাবাকে টার্গেট করে মারধর করতে থাকে। এতে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়।

টাংরির বাজার এলাকার রশিদ জানায়, গতকাল রাতে ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম ও চানসহ তিনজন তার দোকানে চা খেতে বসে। এসময় মজিবর ও তার লোকজন এসে প্রথমে চান ও আব্দুল হালিমকে মারপিট করে। পরে তাদেরকে জোর করে ধরে নিয়ে যায় সন্ত্রাসী মজিবর, ফজলু, ফজু ও এলফাট সহ আরো অনেকে। তিনি বলেন, মজিবর ফজলু এলফাট এই এলাকায় সন্ত্রাসী কায়েম করেছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ও বালু সিন্ডিকেট ব্যবসার সাথে জড়িত। তারা মিলন বাজার ও হারাগাছ চরাঞ্চলে বালু উত্তোলন ও মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বলেও জানান ওই এলাকার শফিকুল।

ঘটনার পর রাত ১২টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন সহকারী পুলিশ কমিশনার (মাহিগঞ্জ জোন )আল ইমরান হোসাইন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করতে রাজি হননি। রংপুর মেট্টোপলিটন হারাগাছ থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম জানান, রাত ৩ টার দিকে হারাগাছ পাইকারি বাজার এলাকায় নিহতের বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুুুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ঘটনাস্থল লালমনিরহাট হওয়ায় এ ব্যাপারে লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা হবে।

লালমনিরহাট সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ আলম জানান, পাওনা টাকার বিরোধের জের ধরে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বুধবার ৮ জনের নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে শালিস বৈঠকে বিনা অপরাধে মাতাব্বর ব্যবসায়ী আবদুল হালিম হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বুধবার দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী।