সতর্কতায় ইসরায়েলি সেনারা, সফর ছেঁটে দেশে ফিরছেন নেতানিয়াহু

প্রকাশিত: ১২:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৪, ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরাকে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের (আইআরজিসি) অভিজাত শাখা কুদস্ বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর একপাক্ষিক বিমান হামলায় নিহত হওয়ার পর সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচেনায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রাখা হয়েছে। বিদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোরে বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেনারেল সোলেইমানি মার্কিন বাহিনীর হামলায় নিহত হওয়ার পর ইসরায়েল সরকার ওই সতর্কতা জারি করে।

এ বিষয়ে নির্দেশনা দিতে ইসরায়েলের সামরিক ও নিরাপত্তা প্রধানদের তেলআবিবে ডেকে পাঠান প্রতিরক্ষামন্ত্রী নাফতালি বেনেত। পরে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেন তিনি।

ইসরায়েল মনে করছে, সবচেয়ে চৌকস একজন সমরবিদকে এভাবে হারানোয় ইরান তার আঞ্চলিক মিত্রদের সহায়তায় ইসরায়েলকে টার্গেট করতে পারে। এক্ষেত্রে তারা হামলা করতে পারে উত্তরে থাকা লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হেজবুল্লাহর মাধ্যমে, অথবা ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর মাধ্যমে।

সীমান্তে সতর্কতা জারির পাশাপাশি ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে থাকা তাদের মিশনগুলোকেও সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে বলেছে। তারা আশঙ্কা করছে, ইরান কোনোভাবে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণের পথ খুঁজতে পারে।

এদিকে গ্রিস সফররত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। তবে কেন তিনি দেশে ফিরছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।

শুক্রবার ভোরে বাগদাদ বিমানবন্দরে মার্কিন বাহিনীর বিমান হামলায় জেনারেল সোলেইমানি নিহত হন। তিনি খামেনীর সবচেয়ে আস্থাভাজন জেনারেলদের একজন ছিলেন। ১৯৯৮ সালে বিপ্লবী গার্ডের প্রধানের দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেকটা নিভৃতে তিনি কাজ করতে থাকেন। তার কৌশলের কারণে লেবাননের হেজবুল্লাহ, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী এবং ইরাকের শিয়াপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জোরদার সম্পর্ক গড়ে ওঠে ইরানের। এর ফলে সীমানার বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত অঞ্চলে ইরানের প্রভাব-বলয় গড়ে ওঠে। যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েলসহ তেহরানের বিরুদ্ধ-শক্তির।

এরমধ্যে ইরাকের সরকারবিরোধী ও সরকার-সমর্থকদের বিক্ষোভ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে, ইরানের বিভিন্ন গোষ্ঠী ফায়দা লুটতে চাইছে। সম্প্রতি মার্কিন দূতাবাসে হামলার পেছনে ইরানের ওই গোষ্ঠীগুলোই জড়িত বলে দাবি করে তারা। সেই গোষ্ঠীগুলোর প্রধান হিসেবে সোলেইমানিকে ‘নির্মূল’ করার পরিকল্পনার কথা বলছিল শত্রুপক্ষ। শেষতক শুক্রবার সোলেইমানিকে প্রাণ দিতেই হলো।

তবে এই ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ‘চরম প্রতিশোধের মুখে পড়তে হবে’ বলে হুংকার ছেড়েছেন খামেনী। তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বের কুচক্রি ও শয়তান রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে অনেক বছর ধরে একনিষ্ঠ ও বীরোচিত জিহাদ চালিয়ে গেছেন জেনারেল সোলেইমানি। শাহাদাতের যে আকাঙ্ক্ষা তিনি পোষণ করতেন শেষ পর্যন্ত সেই মর্যাদায় তিনি অধিষ্ঠিত হলেন। তার রক্ত ঝরেছে মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রু যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। যেসব অপরাধী তাদের নোংরা হাত দিয়ে গতরাতে জেনারেল সোলেইমানির রক্ত ঝরিয়েছে তাদের জন্য ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।’