চাষের জমি কমলেও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ খুলনা

প্রকাশিত: ৬:১৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০

আতিয়ার রহমান,খুলনাঃএকদিকে কমছে কৃষি জমি। অন্যদিকে বাড়ছে ফসলের উৎপাদন। কৃষকের পুনর্বাসন ও প্রণোদনা, ফসল উৎপাদন এবং তদারকি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে চাহিদার অতিরিক্ত খাদ্য শষ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে খুলনার কৃষকরা। ফলে দানা শষ্য এবং শাকসবজি উৎপাদনে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে খুলনা। অন্যদিকে চাহিদার অতিরিক্ত শষ্য কৃষকের নিকট থেকে কিনে সরকার বিভিন্ন জেলায় বন্টন করে থাকেন। অন্যদিকে খুলনায় বছরে ২ হাজার ৮শ’ ৩১ হেক্টর কৃষি জমি কমছে।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের সবশেষ জরীপ অনুযায়ী, খুলনা বিভাগে প্রতি বছর ২ হাজার ৮শ’ ৩১ হেক্টর জমি কমছে। যার হার দশমিক ২১ শতাংশ। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত খুলনা বিভাগে কৃষি জমি কমার হার ছিল দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এসব জমিতে বসতবাড়ি, বাণিজ্যিক ভবন ও মিল কলকারখানা গড়ে ওঠায় উদ্বেগজনকহারেই কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন।

খুলনা মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শচীন্দ্র নাথ বিশ্বাস যায়যাযদিকে বলেন, ‘বিশেষ করে গ্রাম এলাকায় ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট হচ্ছে, শহর অঞ্চলে হচ্ছে অফিস-আদালত, কল-কারখানা। এসব কারণে আমাদের কৃষি জমি কমে যাচ্ছে।’

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, গত ৫ বছরে খুলনায় রেকর্ড পরিমান খাদ্য শষ্য উৎপাদন হচ্ছে। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিপর্যয় কাটিয়েও খুলনার কৃষকরা খাদ্যশষ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্যভাবে সফল হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, খুলনায় বসবাসরত মানুষের সংখ্যা ২৬ লাখের কিচু বেশি। প্রতিজনে ৪৪২ গ্রাম খাবারের চাহিদা হিসেবে জেলায় ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে মানুষের স্বাভাবিক খাদ্যসহ বীজ এবং গো-খাদ্যখাতে দানা শষ্যের (ধান,গম,ভুট্টা) চাহিদা ছিল ৪লাখ ৮০ হাজার মেট্রিকটন।

ওই বছর উৎপাদন হয়েছে ৪লাখ ৯২ হাজার ৬৮৩ মেট্রিকটন। উদ্বৃত্ত ছিল ১২ হাজার ৪৮৩ মেট্রিকটন। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৪ মেট্রিকটন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৮১৯ মেট্রিকটন। উদ্বৃত ছিল ১৫ হাজার ২১৫ মেট্রিকটন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪লাখ ৯৪ হাজার১৫৬ মেট্রিকটন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮৬ মেট্রিকটন। উদ্বৃত্ত রয়েছে ৪২ হাজার ৪৩০ মেট্রিকটন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৫ লাখ ৪৪৫ মেট্রিকটন চাহিদার বিপরিতে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৮২১ মেট্রিকটন। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ৫ লাখ ২ হাজার ৬৬ মেট্রিকটন চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৮৫৯ মেট্রিকটন। এ বছর অতিরিক্ত উৎপাদনের পরিমান ২৮ হ্জাার ৫৯৪ মেট্রিকটন।

একই সূত্র জানিয়েছে, দানা শষ্যের পাশাপাশি শাক সবজি উৎপাদনেও রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে খুলনায়। গত ৫ বছরে গড়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিকটন শাক সবজি উৎপাদন হয়েছে খুলনায়।
পূর্বের থেকে এখন বেশি খাদ্য উৎপাদনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন কৃষকরা। ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক আব্দুর ছুবুর বলেন, একসময় শুধু একবার ফসল উৎপাদন করতাম। তাও যা হতো তা দিয়ে শুধু বছর খোরকি হতো। এখন একই জমিতে তিনবার ধান ফলাই।

বটিয়াঘাটার কৃষক মঈদুল ইসলাম বলেন, একই জমিতে ধান সাথে সাথে জমির আইলের ওপর বিভিন্ন শাক সবজির চাষও করি। এতে লাখ বেশি হয়। সরকারও সব বিষয়ে সহযোগীতা করে।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে- জেলার ৯ উপজেলা মিলে মোট জমির পরিমান রয়েছে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৪২ হেক্টর। এরমধ্যে অনাবাদি এবং সাময়িক পতিত জমির পরিমান ২ লাখ ৮৬ হাজার৬০০ হেক্টর। মাত্র ১ লাখ ৪২ হাজার হেক্টও জমিতে ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। সরকারি এ দপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে-অল্প জমিতেই অধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে বর্তমানে।
এর কারণ হিসেবে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ হাফিজুর রহমান যায়যায়দিকে বলেন,

এ সফলতা কৃষের পরিশ্রম এবং কৃষি বিভাগের প্রযুক্তিগত সহায়তায় হয়েছে। মানুষ এখন অধিক সচেতন। এক জমিতে আগে যেখানে এক ফসলের বেশি উৎপাদন করতো না সেখানে মানুষ তিন ফসল নিচ্ছে। এছাড়াও জমিতে সমন্বিত চাষের প্রবনতাও বেড়েছে। যে কারণে ফসল ও উৎপাদন হচ্ছে বেশি। তিনি বলেন, সরকার কৃষকদের চাষে উদ্বৃদ্ধ করতে প্রণোদনারও ব্যবস্থা করেছে। কমমূল্যে বীজ সার দিচ্ছে। আবার উচ্চমূল্যে ধানও ক্রয় করছে। পন্য উৎপাদন ও বিপননে কৃষকের আস্থা সৃষ্টি হওয়ায় তারাও অধিক ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে।