ধুনটে চাঞ্চল্যকর শিশু ধর্ষণসহ হত্যা মামলার ৪ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

প্রকাশিত: ১:২৭ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : বগুড়ার ধুনটে ৭ বছরের শিশু শিক্ষার্থী তাবাচ্ছুমকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৪ যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।শুক্রবার রাতে ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের নসরতপুর গ্রামের বাড়ি থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতারা হলো- নসরতপুর গ্রামের তোজাম্মেল হকের ছেলে বাপ্পি আহম্মেদ (২২), একই গ্রামের দলিল উদ্দিন তালুকদারের ছেলে কামাল পাশা (৩৫), ছানোয়ার হোসেনের ছেলে শামীম রেজা (২২) ও মৃত সাহেব আলীর ছেলে লাভলু শেখ (২১)।

শনিবার গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা বগুড়ার আদালতে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশু শিক্ষার্থী তাবাচ্ছুক খাতুন ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের নসরতপুর গ্রামের বেল্লাল হোসেনের মেয়ে এবং স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাবা-মা জীবিকার তাগিদে ঢাকায় বসবাস করায় সে তার দাদা-দদির সঙ্গে বাড়িতেই ছিল। গত ১৪ ডিসেম্বর ৮টার দিকে শিশু তাবাচ্ছুম তার দাদা-দাদি ও দুই ফুফুর সঙ্গে নসরতপুর গ্রামের ওয়াজ মাহফিলে যায়। সে ওয়াজ মাহফিলের আশপাশে ঘোরাঘুরির এক পর্যায়ে রাত ১০টার দিকে নিখোঁজ হয়। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে রাত ১টার দিকে ওই গ্রামের একটি বাঁশঝাড়ে ওই শিশুকন্যার লাশ দেখতে পায়। দুর্বৃত্তরা তাকে গণধর্ষণের পর হাতের নখ থেঁতলে দিয়ে শ্বাসরোধে নিমর্মভাবে হত্যা করে লাশ বাঁশঝাড়ে ফেলে রেখে যায়। পরে ধুনট থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে।

এ ঘটনায় পরদিন ১৫ ডিসেম্বর ধর্ষিতার বাবা বেল্লাল হোসেন খোকন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ধুনট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তবে মামলায় কোনো আসামির নাম না থাকায় এবং কোন ক্লু না থাকায় মামলা তদন্ত করতে অনেকটাই বেগ পেতে হয় ধুনট থানা পুলিশের।

এদিকে শিশু তাবাচ্ছুমকে ধর্ষণের পর মির্মমভাবে হত্যার ঘটনার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

অবশেষে ঘটনার দীর্ঘ ১২ দিন পর ২৫ ডিসেম্বর রাতে ধুনট থানা পুলিশ চাঞ্চল্যকর এই শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটায় জড়িত ৪ যুবককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা দীর্ঘদিন ধরেই এই ঘটনার পরিকল্পনা করে আসছিল। ঘটনার দিন শিশু তাবাচ্ছুম ওয়াজ মাহফিলের পাশের একটি দোকানে বাদাম কিনতে যায়। এ সময় বাপ্পি তার প্রতিবেশী ভাতিজা তাবাচ্ছুমকে বাদাম কিনে দিয়ে তার বাড়িতে পৌঁছে দিতে চায়। কিন্তু তাবাচ্ছুম তার সঙ্গে যেতে না চাইলে বাপ্পি তাকে মুখ চেপে ধরে টেনেহিঁচড়ে পার্শ্ববর্তী নসরতপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি টিনের ঘরে নিয়ে যায়।

এ সময় বাপ্পির পিছু পিছু তার বন্ধু কামাল পাশা, শামীম রেজা ও লাভলু শেখও সেখানে পৌঁছে যায়। এরপর প্রথমে বাপ্পি ওই শিশুকে মুখ চেপে ধরে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে একে একে ওই তিনজনও তাকে ধর্ষণ করে। এরপরও তারা শিশুকে ছেড়ে না দিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ধর্ষণ করতে থাকে। মুখ চেপে ধরার কারণে শ্বাস নিতে না পেরে শিশু তাবাচ্ছুম মারা যায়। এরপর ধর্ষকরা ঘটনাটি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে তাবাচ্ছুমের বাম হাতের একটি নখ থেঁতলে দেয় এবং বুকে আঁচড়ের চিহ্ন এঁকে দেয়। তারপর তারা তাবাচ্ছুমের বাবা খোকনের প্রতিপক্ষ মোকাম্মেলের বাড়ির পাশে লাশ ফেলে রেখে আসে।

ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর তদন্তে মাঠে নামে পুলিশ। দীর্ঘ তদন্তের পরই আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা শনিবার আদালতে স্বীকাররোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।