চিতলমারীতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গা দখল; আতঙ্কে প্রকল্পবাসীরা

প্রকাশিত: ১:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৩, ২০২০
?????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????????

বিভাষ দাস, চিতলমারী (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার খলিশাখালী আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি দখল করেছে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। চালাচ্ছে আরো জমি দখলের পায়তারা। প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি, মার-পীট ও কেসকান্ডের শিকার হতে হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের। ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দীন মজুর, গরীব ও নিঃস্ব ২০ টি পরিবার।

১৯৯৮ সালে চিতলমারী উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নে বাবুগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বলেশ^র নদীর তীরে ২ একর ৭৫ শতক জায়গা নিয়ে খলিশাখালী আশ্রয়ণ প্রকল্প গঠন করে তৎকালীন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছিন্নমূল, দলিত সম্প্রদায় এবং হত দরিদ্রদের নিয়ে এই বসতী গড়ে তোলা হয়। পরিবার প্রতি ১৪.৭৫ শতক জমি দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালে চিতলমারী শেরেবাংলা ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পবাসীদের হাতে দলিল তুলে দেন বাগেরহাট ১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন। নিঝুম এ পল্লীতে বিদ্যুতের আলো না থাকলেও জ্ঞানের আলোর কমতি নেই। এখান থেকেই বিএ এবং অনার্স পাশ করেছে ২জন। বর্তমানে বিএ ও দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী রয়েছে আরো ৫জন।

গত কয়েক বছরের ব্যবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় অর্ধেক জমি দখল করে নিয়েছে স্থানীয় খলিশাখালী গ্রামের প্রভাবশালী ধীরেন্দ্র নাথের ছেলে গোবিন্দ ঘরামী, আশিষ বালার ছেলে শান্তি বালা, ভূপেন ঘরামী ও দাসী ঘরামী। জমি দখল করে যে যার মত ঘর বাড়ী তুলেছে, গাছপালা লাগিয়েছে এবং শাক শব্জীর চাষ করেছে তারা।

এ পল্লীর বাসিন্দা শুভ মিস্ত্রী জানায়, “এখানে আমরা ভিষন কষ্টে আছি। প্রভাবশালীরা আমাদের জমি দখল করে নিয়েছে। গাছ কেটে নিচ্ছে। আমাদের প্রতিবাদ কোন কাজে আসছেনা। আমরা তাদের কাছে জিম্মি হয়ে আছি। কয়েক দিন আগে সন্ধ্যা বেলায় নায়েব সাহেবকে নিয়ে আসছিল গোবিন্দ ঘরামী। তার পরদিন সকাল বেলা আমাদের জমিতে বেগুন গাছ লাগিয়েছে সে। আমরা এ বিষয়ে থানার ওসি এবং ইউএনও সারের কাছে নালিশ করে আসছি। কিন্তু এখনো কোন প্রতিকার পাইনি।” পঞ্চাশোর্ধ প্রকল্প বাসিন্দা কমলা মতি জানায়, “ঘুর্ণিঝর বুলবুলের আঘাতে আমাদের ঘর ভেঙে গেছে। ঘর মেরামতের জন্য গাছ কাটতে গেলে বাবুগঞ্জ বাজারের প্রভাবশালী শান্তি রঞ্জন গাছ কাটতে বাধা দেয়। বলে, গাছ কাটতে গেলে হাত কেটে নেবো। আমরা ভয়ে ভাঙা ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করলেও ঘর মেরামত করতে পারছি না। এই তীব্র শীতে আমাদের বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েজন জানান, গোবিন্দ ঘরামী, শান্তি বালা, ভূপেন ঘরামী ও দাসী ঘরামী জাল-জালিয়াতি করে কাগজ পত্র বানিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের জমি দখল করে আছে। আশ্রয়ণবাসীরা প্রভাবশালীদের কাছে অসহায়। প্রতিবাদের সামর্থ তাদের নেই। অপর দিকে প্রশাসনও এ বিষয়ে কোন নজর দিচ্ছে না।” তবে জমি দখলকারী হিসেবে অভিযুক্ত গোবিন্দ ঘরামী, শান্তি বালা, ভূপেন ঘরামী ও দাসী ঘরামী জানায়, “কাগজপাতি আমাদেরও আছে। এত কথার কাজ নেই”।

এ ব্যপারে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, “ আশ্রয়ণ প্রকল্পের এক ইঞ্চি জায়গা কেউ দখল করার সাহস রাখে না। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তারা যতই প্রভাবশালী হোক।”