রাজধানীর মিরপুরে অবৈধ রিকশা সিন্ডিকেটে অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্য দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ৪:১৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০২০ স্টাফ রিপোর্টার : পরিবেশ দূষণ ও বিদ্যুতের অপচয় রোধে ব্যাটারিযুক্ত রিকশা সড়কে চলাচলে অনুমোদন নেই সরকারের পক্ষ থেকে। ফলে ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশা কার্যত অবৈধ। তবুও থেমে নেই এমন অটোরিকশার ব্যবহার। বরং দিন দিন রাজধানীর সড়কগুলোতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অটোরিকশার চালক ও মালিকরা বলছেন, বিধি অনুযায়ী অবৈধ হলেও রাস্তায় চলতে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না। কারণ একদিনে যেমন এলাকার নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে চলেন, তেমনি সড়কে তাদের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা, সেই পুলিশ তাদের কাছে ‘ম্যানেজড’। অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হলে এই দুই পক্ষ, নেতা ও পুলিশ— উভয়ে বড় অঙ্কের মাসোহারা হারাবে। সে বিবেচনায় অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করার রাস্তা সহজ নয়। এসব অটোরিকশার চালক ও মালিকদের কাছ থেকে মাসোহারা তোলা হয় নিয়মিত। প্রতি মাসে এর পরিমাণ অর্ধ-কোটি টাকা পর্যন্ত। সে হিসাবে বছরে আড়াই থেকে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা চাঁদা দিয়ে থাকেন অটোরিকশার চালক-মালিকরা! অভিযোগ রয়েছে, এসব টাকার ভাগ স্থানীয় নামধারী কিছু নেতাকর্মী ও থানা পুলিশের মধ্যে ‘ভাগ-বাটোয়ারা’ হয়। এই বিপুল অঙ্কের অর্থের উৎস সহজে বন্ধ করতে রাজি নন কেউ। ফলে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজধানীর রাজপথে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীরা যদি অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়, তবে প্রতিবাদকারীদের নিরব দর্শক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণকারীরাই তখন অপরাধী বনে যান। অটোরিকশার ক্ষেত্রে ঘটছে সেটিই। সরকারপ্রধানের পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ নির্দেশনা না এলে এই ‘মিউচুয়াল ক্রাইম’ বন্ধ হওয়ার কোনো আশা নেই— এমনটিই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর এলাকার বিভিন্ন গুরুপ্তপুর্ণ পয়েন্টগুলো ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি পয়েন্টে ব্যাটারিচালিত রিকশার উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। বিভিন্ন এলাকার রিকশাচালক ও মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চালক-মালিকরা বলছেন, অটোরিকশা চালানোর জন্য প্রতিটি এলাকাতেই সুনির্দিষ্ট ‘ব্যবস্থা’ আছে। থানা পুলিশ ও স্থানীয় নেতাদের যৌথ উদ্যোগে ‘লাইনম্যান’দের মাধ্যমে প্রতিটি রিকশার জন্য একটি করে কার্ড ইস্যু করা হয়। এই কার্ডে উল্লেখ থাকে, কোন অটোরিকশা কোন এলাকা পর্যন্ত চলতে পারবে। আর এই কার্ডের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে দুইহাজার টাকা করে দিতে হয় লাইনম্যানকে। রিকশাচালকরা জানালেন, প্রতিটি এলাকার জন্য কার্ডের রঙ হয় আলাদা। আবার একেক এলাকার কার্ডে চিহ্নও থাকে আলাদা আলাদা। কোনো এলাকার কার্ডে থাকে কাঁঠাল, তো কোনো এলাকার কার্ডে ইলিশ মাছের দেখা মিলবে। একইভাবে নানা ধরনের ফুল ও ফল ব্যবহার করা হয়ে থাকে বিভিন্ন এলাকার চিহ্ন হিসেবে। ‘লাইন ভাড়া’র টাকা কার কাছে জমা দেন— জানতে চাইলে রিকশাচালকরা বলেন, আমরা যতটুকু জানি এ টাকা পুলিশের কাছে যায়। তবে সরাসরি পুলিশ এ টাকা তোলে না। আমরা জমা দেই লাইনম্যানের কাছে। কিন্তু টাকা না দিলে পুলিশ রিকশা রেকার করে। কার্ড যাদের আছে, তাদের আটকাবে না। মিরপুর ১০ এলাকার তিন লাইনম্যানের সঙ্গে কথা হয় তারা কেউই নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। তারা জানান, অটোরিকশা থেকে একসময় স্থানীয় নেতারা মাসোহারা তুলতেন। গত কয়েকবছর ধরে এই টাকার সিংহভাগ দিতে হয় স্থানীয় থানাকে। সেখানকার কর্মকর্তাদের মধ্যে এই টাকা ভাগ হয়। আর বাকি একটি অংশ যায় স্থানীয় নেতাদের পকেটে। আর পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারাও পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত বলে দাবি তাদের। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তাই তাদের সাফ কথা— ‘পত্রিকায় খবর ছাপলেও কিছুই হবে না।’ রিকশা নিয়ে কাজ করে— এমন সংগঠনগুলোর তথ্য, রাজধানীতে ন্যূনতম দুই লাখ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে। কোনো কোনো সংগঠন বলছে, এই সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। চালক-মালিকদের দেওয়া তথ্য বলছে, এসব রিকশাকে প্রতি মাসে এক থেকে দুই হাজার টাকা দিতে হয়। সেক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই লাখ রিকশার প্রতিটির জন্য মাসে একহাজার টাকা চাঁদা ধরলেও সেখান থেকে আসে ২০ কোটি টাকা। তিন লাখ রিকশা ধরলেই সেই অঙ্ক ৩০ কোটি! সে হিসাবে বছরে আড়াই থেকে সাড়ে তিনশ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে এসব অটোরিকশাকে ঘিরে। রিকশাচালকদের মতো একটি প্রান্তিক পেশাজীবীর পকেট থেকেই এই বিপুল অঙ্কের টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে না কিছু। Share this:FacebookX Related posts: মিরপুরে একটি ভবন লকডাউন, ঘিরে রেখেছে পুলিশ মিরপুরে সেই বাড়ির পাশে আরও একজনের মৃত্যু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করলো নৌবাহিনী রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক পানির নিচে রাজধানীর একটি ব্লাড ব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক বন্ধ রাজধানীর যেসব এলাকায় গ্যাস থাকবে না মঙ্গলবার ‘যখন শুনি শিক্ষকরা নকল সাপ্লাই করে, আমার লজ্জা হয়’ করোনায় পিছিয়ে যেতে পারে এইচএসসি পরীক্ষা করোনাভাইরাস: আরও সাড়ে ৯ হাজার টন চাল, সোয়া ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ‘১৫ অগাস্টের ঘাতকদের প্রশ্রয় দিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান’ করোনার টিকা কিনতে এডিবির সহযোগিতা পাবে বাংলাদেশ ৬২ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলছে SHARES Matched Content জাতীয় বিষয়: অবৈধ রিকশা সিন্ডিকেটেঅর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্যমিরপুরেরাজধানীর