পরীক্ষা নিয়েই বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চান প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা

প্রকাশিত: ৬:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০২০

নিউজ ডেস্ক :আগামী বছর পরীক্ষা নিয়েই নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার পক্ষে মত দিয়েছেন রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনটি ক্লাস্টারে নয়টি ধাপে পরীক্ষা নেয়ার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। যদি কোনোভাবে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হয়, তাহলে লটারির মাধ্যমে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির করার প্রস্তাব দিয়েছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।

করোনা পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) এক ভার্চুয়াল সভায় এ প্রস্তাব দেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। সভায় সভাপতিত্ব করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক।

সভা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মতো এবারো পরীক্ষা নিয়ে ভর্তি করানোর পক্ষে জোর দিয়েছেন রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিকের স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা। রাজধানীর ৪১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনটি ক্লাস্টারে তিন দিন পরীক্ষা নেয়া হলেও এবার প্রতিটি ক্লাস্টার তিন দিনে ভাগ করে মোট ৯ দিন পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।

অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হলেও তাতে সকলের পক্ষে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হবে না। এ কারণে পর্যায়ক্রমে অল্প সংখ্যক করে সশরীরে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন স্কুলের প্রধানরা।

সূত্র আরও জানায়, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে লটারি পদ্ধতি অবলম্বন করলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে বলে সভায় মন্তব্য করেন মাউশির মহাপরিচালক। তাই কোনোভাবে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব না হলে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করতে হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজিমপুর গর্ভ. গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আবু বকর সিদ্দীক মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার প্রতি মত দিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ পরীক্ষা নেয়া সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ভর্তির ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি এবং অংক বিষয়ের পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। এতে করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। এ কারণে পরীক্ষা পদ্ধতিতে মতামত দেয়া হয়েছে।’

‘তবে অল্প সংখ্যক করে নয়টি ধাপে এ পরীক্ষা নিতে তারা প্রস্তাব করেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করতে কেউ কেউ এমসিকিউ পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেছেন। তবে পরীক্ষা নেয়া হলে লিখিত পরীক্ষা নেয়া প্রয়োজন বলে কেউ কেউ মত দিয়েছেন।’

মাউশির সহকারী পরিচালক (বিদ্যালয়-১) মো. আমিনুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘চলতি মাসে সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা জারি করা হয়েছে। তবে কোন পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সে কারণে মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে এ-সংক্রান্ত নানা প্রস্তাব এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর রাজধানীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ১০ হাজারের বেশি শূন্য আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়ে থাকে। এসব আসনে ভর্তির জন্য প্রায় এক লাখের মতো আবেদন জমা হয়। প্রতি আসনে ৫-৬ জন প্রার্থীকে প্রতিযোগিতা করতে হয়। এ কারণে ভর্তির সময় শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বড় সমাগম হয়। এবার করোনা পরিস্থিতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

ভর্তি নীতিমালা ২০২০ অনুযায়ী, এবারো আগের মতো রাজধানীর ৪১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তিনটি ক্লাস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তবে আগে প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি বিদ্যালয়ে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হলেও এবার প্রতিটিতে পাঁচটি করে মোট ১৫টি বিদ্যালয়ে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

সকল বিদ্যালয়ে পাঁচ শতাংশ আসন খালি রেখে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। এসব আসনে বদলি হয়ে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তানদের ভর্তি করানো হবে।

ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে লটারি আয়োজন করা হলেও দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পূর্ণমান ৫০ নম্বরে বাংলা, ইংরেজি ও অংক পরীক্ষা নেয়া হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ভর্তিতে এই তিন বিষয়ে পূর্ণমান ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে।

মাউশির পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামী বছর শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর বিষয়ে একটি পূর্ব প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের মতামত চাওয়া হয়েছে। তারা বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন।’

তিনি বলেন, বাস্তবসম্মত মতামতগুলো সমন্বিত করে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। এর মধ্যে যেটি চূড়ান্ত করা হবে, সেটি বাস্তবায়ন করা হবে।