ধোবাউড়ায় তদারকি না থাকায় মহিলা মার্কেট এখন পুরুষদের দখলে

প্রকাশিত: ১১:৩০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০২০
Exif_JPEG_420

ইস্রাফিল হোসাইন পাপ্পুঃ- ধোবাউড়া ময়মনসিংহ প্রতিনিধি- ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ইউনিয়ন পরিষদের নজরদারি আর এল জি ই ডি কর্তৃপক্ষের তদারকির দায়িত্ব অবহেলায়, বাস্তবায়নে ব্যর্থ নারীদের স্বাবলম্বী করার সরকারের উদ্যোগ। হতদরিদ্র নারী উন্নয়নের জন্য মহিলাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত করতে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের হাট-বাজারে নির্মিত মহিলা মার্কেটগুলো অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে অগ্রিম টাকায় ভাড়া নিয়ে এখন পুরুষদের দখলে। শুরু থেকেই নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বরাদ্দ দেয়া হয় এই মার্কেটগুলোতে।

এলজিইডি বিভাগের তদারকি না থাকায় পাঁচটি মার্কেটের ৬০টি দোকানের ৫০ টি দোকান বেদখল হয়ে গেছে। সদর ইউনিয়নের সদর বাজারে মহিলা মার্কেটের দু’টি দোকান শুধু মহিলারা পরিচালিত করে আসছে। দোকানগুলো অপেশাদারী একশ্রেণির প্রভাবশালী তাদের নামে বরাদ্দ নিয়ে অগ্রীম টাকা নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় সাবলেট দিয়েছে। মহিলা মার্কেট প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে মহিলা মার্কেট কথাটি পর্যন্ত লেখা নেই এবং অযত্নে অবহেলায় মার্কেটের অাঙ্গিনায় পরে আছে দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা আবর্জনার স্তুপ।

বাঘবের ইউনিয়নের মুন্সিরহাট বাজারে নতুন বাজারে ১২ কক্ষের মার্কেটে নেই একজন মহিলা ব্যবসায়ী। পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের সদর বাজারে নির্মিত মহিলা মার্কেটে ২জন মহিলা বরাদ্দকৃত কক্ষে ব্যবসা করার চিত্র দেখা গেলেও গামারীতলা ইউনিয়নের কলসিন্দুর বাজারে নির্মিত মাকর্টে ২ জন মহিলা ব্যবসায়ী। ঘোষগাঁও ইউনিয়নের সদর বাজারে নির্মিত ১২ কক্ষের মহিলা মার্কেটও রয়েছে পুরুষ ব্যবসায়ীদের দখলে।

১৯৯৮ সাল থেকে ২০০২ অর্থবছর পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মার্কেট তিনটি নির্মাণ করে। ২০০৩ সালের মাঝামাঝি সময় মার্কেটগুলো চালু করা হয়। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাজারে দোকান রয়েছে, কিন্তু মানসম্মত নয় নিজেই দোকান চালান এমন মহিলা। মহিলা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের সদস্য। মহিলা নিজের বাড়িতে দোকান করেন। উৎপাদনশীল ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা। পরিবার প্রধান মহিলা যিনি ব্যবসা করতে আগ্রহী। অর্থনৈতিকভাবে অসুবিধাগ্রস্ত।

এমন সব মহিলাদের মধ্যে দোকান বরাদ্দ দেয়ার কথা থাকলেও তা শুরুতেই মানা হয়নি। প্রতিটি দোকানঘর বরাদ্দপ্রাপ্ত মহিলা ছাড়া কোন পুরুষ পরিচালনা করতে পারবে না। উপজেলা হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি দোকানের প্রতি বর্গফুট হিসাবে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। প্রাপ্ত ভাড়ার শতকরা পাঁচ ভাগ সরকারের-ভূমি রাজস্ব খাতে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। ১৫ ভাগ মহিলা মার্কেটের রক্ষণা-বেক্ষণে ব্যয় হবে এবং বাকি ৮০ ভাগ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের তহবিলে জমা হবে। কোনভাবেই বরাদ্দ পাওয়া মহিলা এ দোকান অন্য কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারবেন না। মার্কেটগুলো রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য নীতিমালায় সবকিছু উল্লেখ করা থাকলেও তা কেবল কাগজ কলমেই সীমাবদ্ধ। এসবের কিছু নেই উপজেলার এই মার্কেটগুলোতে।

নারীদের স্বাবলম্বী করার সরকারের এ উদ্যোগ এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিদের চরম উদাসীনতায় রক্ষণাবেক্ষণহীন অবহেলিত মার্কেটগুলো বর্তমানে পুরুষের দখলে। সড়জমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র।

পোড়াকান্দুলিয়া মহিলা মার্কেটে বরাদ্দকৃত মহিলার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে চায়ের দোকান করা আবুল বাশার সাংবাদিককে বলেন, অগ্রিম ৬ হাজার টাকার বিনিময়ে ৬শ টাকা ভাড়ার চুক্তিতে তিন বছর যাবৎ ব্যবসা করছে। গামারিতলা ইউনিয়নের রিনা খাতুন বলেন, পনের বছর আগে বরাদ্দ নেওয়া বেশিরভাগ মহিলাই নিজের ব্যবসা বন্ধ করে অধিক অর্থের বিনিময়ে অন্যান ব্যবসায়ীদের কাছে ভাড়া দিয়ে আসছে। যা কোন কেউ কোন প্রতিবাদ করে নি।

উপজেলার সদর বাজারে নির্মিত মহিলা মার্কেটের কক্ষ ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী জানান, শুরুতে দোকান ভাড়া দুই শ’ টাকা নির্ধারণ করা ছিল। যা বর্তমানে পাঁচ শ’ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু মেরামতসহ কোন কাজ করা হয় না। এমনকি মার্কেটের পাশের টয়লেটটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে।

অপরদিকে বাঘবেড় এবং ঘোষগাও ইউনিয়নে নির্মিত মার্কেটের একটি দোকানও মহিলা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে না। ফলে নামে মাত্র অধিক নিয়ে নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গ্রহন করা সরকারের উদ্যোগ এখন বাস্তবায়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এনিয়ে পোড়ান্দুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বপন তালুকদার বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবহিত করে দ্রুত তা পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন।

গামরিতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন খান বলেন, মহিলা মার্কেট নিয়ে কয়েকবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং এবং উপজেলা এলজিইডি অফিসকে পূর্বের বরাদ্দকৃত তালিকা বাতিল করে পূণরায় বারদ্দ দেওয়া জন্য জানানো হলেও তা আমলে নেয়নি উপজেলা প্রকৌশলী। এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শাহিনুর ফেরদৌস পূর্বের তালিকা বাতিল করে পূণরায় যোগ্য হতদরিদ্র মহিলাদের বরাদ্দ দেওয়ার অাশ্বাস দিয়েছেন।

চিতলমারীতে বই উৎসব ২০২০ পালিত