আরব বিশ্বে হু হু করে বাড়ছে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা

প্রকাশিত: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৪, ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :মিসরকে সাথে নিয়ে উপসাগরীয় অধিকাংশ আরব দেশ তুরস্ককে কোণঠাসা করার উপায় খুঁজতে তৎপর হলেও সিংহভাগ আরব জনগণ মনে করছে যে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানই তাদের সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী।

তুরস্ক এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ব্যাপারে আরব দেশের সরকার ও জনগণের এই বিপরীত অবস্থান উন্মোচিত হয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত আরব জনমতের ওপর একটি ব্যাপক-ভিত্তিক জরিপের ফলাফলে।

আরব বিশ্বের ১৩টি দেশে পরিচালিত হয় এই জনমত জরিপ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৮ শতাংশই মনে করেন, অন্য যে কোনো দেশের নীতির তুলনায় তুরস্কের মধ্যপ্রাচ্যে নীতি আরব স্বার্থের পক্ষে। ফিলিস্তিন ইস্যু তো বটেই, এমনকি সিরিয়া এবং লিবিয়ায় তুরস্কের বিতর্কিত সামরিক হস্তক্ষেপও সিংহভাগ আরব জনগণ সমর্থন করছে।

তুরস্কের পর চীন ও জার্মানির মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রতি আরবদের মনোভাব সবচেয়ে ইতিবাচক। চীনের নীতির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন ৫৫ শতাংশ, আর জার্মানির নীতির পক্ষে ইতিবাচক মতামত দেন ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা।

উল্টোদিকে, সবচেয়ে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য নীতির ব্যাপারে। এশিয়া ও আফ্রিকায় আরব বিশ্বের ১৩টি আরব রাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাধারণ আরব জনগণের মনোভাব জানতে এই জরিপটি করেছে দোহা এবং বৈরুত ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ।

লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি মনে করেন, তুরস্ক রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যে সাধারণ আরব জনগণের বিরাট একটি অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

হামদি বলেন, সন্দেহ নেই তুরস্কের গ্রহণযোগ্যতা, বিশেষ করে সাধারণ প্রান্তিক আরব জনগোষ্ঠীর কাছে, বাড়ছে। গ্রহণযোগ্যতা বাড়ার পেছনে তুরস্ক রাষ্ট্রের চেয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ভাবমূর্তি প্রধান ভূমিকা রাখছে।

জনমত জরিপে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সাধারণ আরব জনগণের আবেগের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে ইচ্ছুক আরব নেতাদের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

ফলাফলে দেখা গেছে, এখনও ৮৯ শতাংশ আরব মনে করেন যে ফিলিস্তিন ইস্যু বিচ্ছিন্ন কোনো ইস্যু নয়, বরং এটি একটি আরব ইস্যু। এমনকি উপসাগরীয় দেশগুলোর জনগণের মধ্যেও এই মনোভাব এখনও খুবই জোরালো।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখনও ৮৮ শতাংশ আরব ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিপক্ষে। মাত্র ছয় শতাংশ সমর্থন করে। কেন? এ প্রশ্নে উত্তরদাতারা প্রধান কারণ হিসাবে ফিলিস্তিনীদের প্রতি ইসরায়েলের বর্ণবাদী আচরণ এবং ফিলিস্তিনী ভূমি জবর-দখল করার কথা উল্লেখ করেছেন।

কোন দেশ আরবদের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি- এমন এক প্রশ্নের জবাবে ৬৬ শতাংশ উত্তরদাতাই ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইসরায়েলের ব্যাপারে এই বৈরী জনমত বুঝেই হয়ত ইহুদি ওই রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে সৌদি শাসকরা দোটানায় পড়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপসাগরীয় রাজনীতির বিশেষজ্ঞ গিওর্গিও ক্যাফেইরো কিছুদিন আগে টুইট করেন, অনির্বাচিত আরব শাসকদের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা আর আরব জনগণের সাথে সম্পর্ক স্থাপন এক বিষয় নয়। ইসরায়েল নিয়ে মিশরের জনগণের মনোভাবের দিকে তাকালেই তা বোঝা যায়।

ক্যাফেইরো লেখেন, ইরান এবং তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের এই বাস্তবতাকে ব্যবহার করবে।