গ্রাহকের অজান্তে কল রেকর্ড সংগ্রহ বন্ধে হাইকোর্টের অভিমত দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম দৈনিক সময় সংবাদ ২৪ ডট কম প্রকাশিত: ৫:০৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২০ নিউজ ডেস্ক : ফরমাল রিকুইজিশন ও গ্রাহককে অবহিতকরণ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি থেকে কললিস্ট বা কল রেকর্ড সংগ্রহ অবশ্যই বন্ধ করতে হবে বলে অভিমত দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ডিজিটাল ডকুমেন্টকে সাক্ষ্য হিসেবে নিতে এভিডেন্স অ্যাক্টও সংশোধন করতে মতামত দিয়েছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারকদের স্বাক্ষরের পর রায়টি গত ২৬ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। শিশু সৈকত হত্যা মামলার রায়ে বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, মো. রুহুল কুদ্দুস ও এ এস এম আব্দুল মোবিনের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ পূর্ণাঙ্গ রায়ে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে অভিমত দেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৪৯ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়, যা মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সাংবাদিকদের জানান আইনজীবীরা। এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ আগস্ট শিশু সৈকতকে অপহরণের পর হত্যা মামলায় প্রধান আসামি নেত্রকোনা সরকারি কলেজের ছাত্র অলি আহম্মদকে (২২) মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। মামলার বিবরণে জানা যায়, এক লাখ টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় সৈকতকে (৭) হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নেত্রকোনার কলমাকান্দা থানায় ২০১০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলা করেন সৈকতের বাবা মো. সিদ্দিকুর রহমান। ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর এই মামলায় প্রধান আসামি নেত্রকোনা সরকারি কলেজের ছাত্র অলি আহম্মদকে (২২) মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪। এছাড়া পলাতক আসামি সবুজ মিয়া ও তাপস বন্ধু সাহাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন। তবে মামলার আরেক আসামি আনিছ মিয়া শিশু হওয়ায় তাকে ১০ বছরের সাজা দেন একই আদালত। আইন অনুযায়ী শিশুর অপরাধের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হতে পারে কি-না, এ নিয়ে আইনগত প্রশ্ন উত্থাপিত হলে হাইকোর্ট বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়। আদালত রায়ে বলেন,এটি আমাদের সাধারণ অভিজ্ঞতা যে, আজকাল নাগরিকদের মধ্যে ব্যক্তিগত অডিও-ভিডিওসহ ব্যক্তিগত যোগাযোগের বিষয়গুলো প্রায়ই বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় এবং প্রকাশিত হয়। সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে আমাদের নাগরিকদের চিঠিপত্রের এবং যোগাযোগের অন্যান্য উপায়ে গোপনীয়তার অধিকারের নিশ্চয়তা অবশ্যই ভুলে যাওয়া উচিত নয় বলে রায়ে বলা হয়েছে। রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বজায় রাখার সাংবিধানিক ম্যান্ডেট রক্ষার জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এবং বাংলাদেশে পরিচালিত ফোন সংস্থাগুলোর একটি বৃহৎ দায়িত্ব রয়েছে। সংবিধানের সাথে মেলে না এমন আইনের অনুমতি না থাকলে তারা (কোম্পানিগুলো) তাদের গ্রাহক ও দেশের নাগরিকদের যোগাযোগ সম্পর্কিত কোনো তথ্য কাউকে সরবরাহ করতে পারে না। রায়ে আরও বলা হয়েছে, কারও যোগাযোগের তথ্য সম্পর্কিত কল তালিকা এবং তথ্যের জন্য কোনো মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সংস্থা/অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানাতে হবে। অন্যথায় সরবরাহ করা দস্তাবেজটি তার স্পষ্টতার মূল্য হারাবে এবং সরবরাহকারী ব্যক্তি/কর্তৃত্ব সংবিধানের আওতাধীন গ্যারান্টিযুক্ত একের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের পক্ষেও দায়বদ্ধ হবে। সৈকত হত্যা মামলায় উচ্চ আদালত অভিযুক্ত অলির কল তালিকা তার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিল, কারণ সেগুলো বেসরকারি মোবাইল অপারেটর সংস্থা কর্তৃক অথরাইজড করা ছিল না বা যারা সংগ্রহ করেছে তাদের স্বাক্ষরও ছিল না। হাইকোর্ট আরও বলেছেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ আইন সংশোধন না করা বা ডিজিটাল ডকুমেন্টকে প্রমাণ হিসেবে আইন করা না হলে কোনো ব্যক্তির কললিস্ট এবং টেলিফোন কথোপকথনের কোনো স্পষ্ট মূল্য থাকতে পারে না। রায়ে প্রত্যাশা করা হয়েছে যে, আইন সংশোধন করতে বা এ লক্ষ্যে একটি নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেবে। হাইকোর্ট বলেন, ভারতে ইলেকট্রনিক রেকর্ড নিয়ে কাজ করার জন্য তাদের আইনে কিছু বিশেষ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল এবং প্রমাণের সংজ্ঞা সংশোধন করা হয়েছিল। এটিও সময়ের দাবি যে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশ এবং বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে এর ব্যাপক ব্যবহারের পরে, আমাদের আইনটি উন্নত প্রযুক্তির সাথে মোকাবিলার জন্য সংশোধন বা নতুন আইন দ্বারা আপ টুডেট হওয়া উচিত। যদিও সৈকতের মামলায় ভিডিওগ্রাফি বা স্টিল ফটোগ্রাফি, রেকর্ড করা টেপ এবং ডিসপ্লে প্রমাণের মূল্য দেয়া হয়েছিল, হাইকোর্টের প্রমাণ হিসেবে সাক্ষ্য আইন অনুসারে কল তালিকার মতো ডিজিটাল নথির প্রমাণ ছাড়া তা গ্রহণ করতে পারেনি। রায়ে আরও বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ এর একমাত্র ব্যতিক্রম হলো, সন্ত্রাসী ব্যক্তি দ্বারা কোনো ইন্টারনেট সাইটের ফেসবুক, স্কাইপ, টুইটারের মাধ্যমে যেকোনো আলোচনা এবং কথোপকথন বা তার অপরাধের সম্পর্কিত স্থির চিত্র বা ভিডিও পুলিশ বা আইন গ্রয়োগকারী সংস্থা দ্বারা তদন্তের জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হলে তা প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। Share this:FacebookX Related posts: হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবে তিতাস জামিন বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের নির্দেশনা আপিল বিভাগে স্থগিত তাবিথ আউয়ালের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট টাঙ্গাইলে ৩ স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় দুজনের দায় স্বীকার বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি প্রতারণার অভিযোগ স্বীকার করেছেন শাহেদ সাহেদের জাতীয় পরিচয়পত্র স্থগিত প্রতারক সাহেদের মামলা তদন্ত করবে র্যাব বিচারকের অপসারণ দাবিতে আইনজীবীদের বিক্ষোভ, এজলাসে তালা ইরফান সেলিমের মামলা বিচারাধীন, এখনই মন্তব্য নয়: র্যাব ডিজি পি কে হালদারের বান্ধবী অবন্তিকা ৩ দিনের রিমান্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা ৩ জনের যাবজ্জীবন, ৫ জনের ২০ বছরের দণ্ড, একজন খালাস SHARES Matched Content আইন আদালত বিষয়: অজান্তেঅভিমতকলগ্রাহকেরবন্ধেরেকর্ডসংগ্রহহাইকোর্টের