করোনা : ট্রায়ালে চমক দেখাল ফুজিফিল্মের অ্যাভিগান, শিগগিরই অনুমোদন

প্রকাশিত: ৬:২৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :তীব্র উপসর্গ নেই এমন কোভিড-১৯ রোগীদের সুস্থ হওয়ার সময় কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ অ্যাভিগান। করোনা রোগীদের ওপর বহুল আলোচিত এ ওষুধের শেষ ধাপের পরীক্ষায় আশাব্যাঞ্জক এই ফল মিলেছে বলে বুধবার জানিয়েছে জাপানের ফুজিফিল্ম হোল্ডিংস করপোরেশন।

ফুজিফিল্মের ওষুধ প্রস্তুতকারক তোয়ামা কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড করোনা রোগীদের ওপর অ্যাভিগানের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালিয়েছে। কোম্পানিটি বলেছে, পরীক্ষায় চমকপ্রদ ফল মেলায় ওষুধটি করোনার চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য শিগগিরই জাপান সরকারের অনুমোদনের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে।

এক বিজ্ঞপ্তিতে জাপানি এই কোম্পানি বলেছে, তারা জাপানের ১৫৬ জন রোগীর ওপর তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল টায়াল পরিচালনা করেছে। এতে দেখা গেছে, করোনা রোগীদের মধ্যে যাদের অ্যাভিগান দেয়া হয়েছিল তারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন মাত্র ১১.৯ দিনে, অন্যদিকে যাদের প্ল্যাসেবো দেয়া হয়েছিল তাদের সময় লেগেছে ১৪.৭ দিন।

রোগীদের সুস্থ হওয়ার সময় কমিয়ে আনার এই ঘটনাকে পরিসংখ্যানগত দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছে কোম্পানিটি।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় অ্যাভিগানের কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর টোকিওতে ফুজিফিল্মের শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে খবর দিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

গত মে মাসে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যাভিগানের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। সেই সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার অংশ হিসেবে ওষুধটি বিনামূল্যে সরবরাহের ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

পরে জাপান সরকার অ্যাভিগানের উৎপাদন ও মজুদ বৃদ্ধির জন্য ফুজিফিল্মকে নির্দেশ দেয়। গত ৭ এপ্রিল জাপান সরকারের জরুরি অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করে। এতে বলা হয়, দেশটির সরকার ২০ লাখ রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে; এমন পরিমাণের অ্যাভিগান মজুদের পরিকল্পনা করেছে। জাপান সরকারের অনুরোধে ফুজিফিল্ম ওষুধটির উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

জাপানি এই কোম্পানি বলছে, অ্যাভিগান এক ধরনের অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ; যা মানবদেহে ভাইরাসের বংশবিস্তারে বাধা দেয়। এর আগে ইবোলা ভাইরাস চিকিৎসায় অ্যাভিগানের জেনেটিক গোত্রীয় ফ্যাভিপিরাভির’র প্রয়োগ করেছিলেন গবেষকরা।

ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে ভালো ফল পেয়েছিলেন তারা। ফ্লুর জরুরি চিকিৎসায় ব্যবহারের জন্য ২০১৪ সালে অ্যাভিগানের অনুমোদন দেয় জাপান সরকার। বিভিন্ন দেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধটি বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে বলেও জানায় জাপান।

করোনা রোগীর অভাবে জাপানে এই ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়েছিল। গত জুলাইয়ে ফুজিতা হেলথ ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এই ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করলেও পর্যাপ্ত রোগীর অভাবে তা শেষ করতে ব্যর্থ হন।

বিবৃতিতে ফুজিফিল্ম বলছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রাপ্ত ডেটা আরও বিশ্লেষণ করে অক্টোবরের শুরুতে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় অ্যাভিগানের ব্যবহারের অনুমোদন চাইবে তারা। চলতি সপ্তাহে জাপানি দৈনিক নিক্কির এক প্রতিবেদনে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়, এ ধরনের কোনও অনুরোধ পাওয়া গেলে তা এক মাসের মধ্যে অনুমোদন পেতে পারে।

এই ওষুধটি একমাত্র জাপান সরকারের অনুরোধে ফুজিফিল্মের তয়ামা কেমিক্যাল সেটির উৎপাদন করতে পারে। জুলাইয়ে অ্যাভিগানের বৈশ্বিক স্বত্ব ভারতের ডা. রেড্ডি ল্যাবরেটরিজের কাছে বিক্রি করে দেয় ফুজিফিল্ম।

অ্যাভিগানের জেনেটিক গোত্রীয় ফ্যাভিপিরাভির নামে ওষুধটি ইতোমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যাচ্ছে। রাশিয়া এবং ভারতে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

সেবন করার এই ওষুধটি শরীরের কোষে ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরিতে বাধা দেয়। তবে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই ওষুধটি তীব্র পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।

সূত্র: রয়টার্স।