নদী ভাঙ্গণে দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই তেতুলবাড়িয়াবাসীর

প্রকাশিত: ৮:২৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : বরগুনার তালতলী উপজেলার পায়রা নদীর প্রতিনিয়ত ভাঙ্গণের ফলে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া জমি, বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নামমাত্র বেড়িবাঁধ দেওয়ায় তা প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম ও জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে যায়। এ নিয়ে আতংকে ভুগছেন ভাঙ্গণ কবলিত এ অঞ্চলের মানুষ।
নিশান বাড়িয়া ইউনিয়নের তেতুল বাড়িয়া ও জয়াল ভাংগা এলাকার পায়রার (বুড়িশ্বর) প্রবলস্রোতে ভয়াবহ ভাঙ্গণে মুহূর্তের মধ্যে এ এলাকার প্রায় শতধিক বাড়িঘর, জমিজমা, মসজিদ, কবরস্থান, গাছাপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আতংকে রয়েছেন আশপাশের আরও কয়েকটি গ্রামের মানুষ।

ভয়াবহ নদী ভাঙ্গণে নিঃস্ব, সর্বশান্ত অসহায় মানুষের বুক ফাটা কান্না দেখার কেউ নেই।

গত এক মাসে পর্যন্ত এ এলাকার ৯ কিলোমিটার বাঁধের কিছু অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

নদী ভাঙ্গণের ঝুঁকির কথা জানিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তেতুলবাড়িয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন বলেন, ‘স্যারেগো কত কইছি, হ্যারা কেউ মোগো কতা হোনেনা (স্যারেদের কত বলেছি, তারা কেউ আমাদের কথা শোনেনা)। মোগোতো ভিডামাডি সব নদীতে শ্যাস অইয়া যাইবে, হ্যাতে হ্যাগো কিচু অইবেনা (আমাদের ভিটামাটি সব নদীতে শেষ হয়ে যাবে)। যেহানে লাগবে দশ আত খাড়া, হে হানে দেয় ছয় আত খাড়া (যেখানে দরকার ১০ হাত খাড়া, সেখানে দেয় ৬ হাত খাড়া)। হ্যারপর বেড়িবাধেঁর লগদাই মাডি কাডে হ্যা থাকপে ক্যামমে? (তারপর বেড়িবাধেঁর নিকটেই মাটি কাটে তাহলে থাকবে কেমনে?)।’

স্থানীয় সেলিম মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার অভাবে স্থায়ী বেড়িবাঁধ হয়না। স্থায়ী বাঁধ হলে আমাদের বাপ-দাদার জমিগুলো রক্ষা পেত।’

স্থানীয়রা জানান, গত এক মাসে এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ, আসবাবপত্র, ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ সময় ভাঙ্গণ কবলিতদের আহাজারি ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। ভাঙ্গণ আতংকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে অনেকে। পায়রার আকস্মিক ভাঙ্গণে সহায় সম্বল আর মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকু হারিয়ে অসহায় মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের খোলা আকাশের নিচে। এ যেন এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এমন তীব্র ভাঙ্গণ এর আগে তারা কখনো দেখেনি।

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী মো. কায়সার আলম বলেন, ‘তেতুলবাড়িয়া কি ছুদিন আগের জলোচ্ছ্বাসে ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেগুলো মেরামত করা হবে।’

সিডরের পর কত বার মেরামত করা হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। তবে ৩-৪ বার মনে হয় মেরামত করা হয়েছে।

বেড়িবাঁধ সংলগ্ন মাটি কাটায় বাধ কতটুকু টেকসই হবে এমন প্রশ্নে কায়সার আলম বলেন, ‘দূর থেকে মাটি কেটে আনার বরাদ্দ না থাকায় বেড়িবাধেঁর পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি থেকেই মাটি কাটতে হয়।’

স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ হবে কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘স্থায়ী বেড়িবাঁধ প্রকল্প আমাদের প্রক্রিয়াধীন আছে।’