বড়াইগ্রামে বোরো ধান-চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি

প্রকাশিত: ১০:৩৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : বড়াইগ্রামে বনপাড়া সরকারি খাদ্য গুদামে চলতি বোরো মৌসুমে চাল-ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সংগ্রহের সময়সীমা শেষ হয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের সামান্য বেশি সিদ্ধ চাল কেনা হয়েছে। আর মাত্র ১৫ মেট্টিক টন ধান ক্রয় হলেও এক ছটাক আতপ চালও কেনা সম্ভব হয়নি। তবে এক্ষেত্রে মিলাররা সরকারি দরের চেয়ে খোলা বাজারে ধান-চালের দাম বেশি বলে জানালেও কৃষকরা লটারির বিষয়টি কম প্রচার হওয়াকে দায়ী করেছেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার ৭৮০.৯৯০ মেট্টিক টন সিদ্ধ ও ৬৫২ মেট্টিক টন আতপ চাল মিলে মোট চার হাজার ৪৩২.৯৯০ মেট্টিক টান চাল এবং ৭৯৮ মেট্টিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত ১১ মে সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। ৩১ আগস্ট এ কার্যক্রমের শেষ দিন ছিল।

উপজেলার তিনটি অটো রাইসমিলসহ মোট ৭০টি চালকলের মালিক সরকারের সঙ্গে চাল দিতে চুক্তিবদ্ধ হন। এছাড়া লটারির মাধ্যমে তিনশ’ জন কৃষককে ধান সরবরাহের জন্য বাছাই করা হয়। কিন্তু ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৫ মেট্টিক টন। আর সিদ্ধ চাল সংগ্রহ হয়েছে তিন হাজার ৪’শ ১০ মেট্টিক টন। আর ৬৫২ মেট্টিক টন আতপ চালের মধ্যে এক ছটাকও কেনা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত অনেক চালকল মালিক ও কৃষক গুদামে চাল ও ধান সরবরাহ না করায় সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি বলে জানা গেছে।

উপজেলা চালকল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সরকার এ বছর প্রতি কেজি বোরো চাল ৩৬ টাকা, আতপ চাল ৩৫ টাকা ও ধান ২৬ টাকা দরে সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে মোটা চালের দাম প্রতি কেজি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা। অর্থাৎ বাজার মূল্যের চেয়ে সরকারের চাল সংগ্রহ মূল্য প্রতি কেজিতে ৬-৮ টাকা কম। চালের দামও একই অবস্থা। এ অবস্থায় আর্থিক লোকসানের ফলে চালকল মালিকেরা সরকারী গুদামে চাল সরবরাহ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।

উপজেলার রামাগাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গুদামে ধান দিতে গেলে ধানের আর্দ্রতা নিরুপণ, ব্যাংক একাউন্ট খোলাসহ নানান ঝামেলার পাশাপাশি অতিরিক্ত পরিবহন খরচ গুণতে হয়। কিন্তু বাজারে সহজেই ধান বিক্রি করা যায়, দামও বেশি। তাই গুদামের চেয়ে বাজারে ধান বিক্রিতেই সুবিধা বেশি। তাছাড়া সরকারীভাবে ধান কেনার জন্য যে লটারী করা হয়েছে এটাও বেশির ভাগ কৃষক জানেন না বলে তিনি দাবী করেন।

উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, করোনা সঙ্কট ও বন্যার কারণে বাজারে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দামও বেড়ে গেছে। তারপরও লোকসান দিয়ে চুক্তি অনুযায়ী গুদামে চাল সরবরাহের চেষ্টা করেছি। তবে তিনি মিলারদের বাঁচাতে কেজি প্রতি পাঁচ টাকা হারে প্রণোদনা প্রদান ও সংগ্রহের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান।

বনপাড়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি এলএসডি) তন্ময় বিশ্বাস জানান, খোলা বাজারে দাম বেশি হওয়ায় কৃষকরা গুদামে ধান দিচ্ছেন না, মিলারদেরও আগ্রহ কম। এখানে একটি মাত্র গুদাম, তার উপর বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এতে ফলে মাঝে মাঝেই ধান-চাল সংগ্রহ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। তবে সংগ্রহের সময়সীমা ১৫ দিন বাড়তে পারে বলে তিনি জানান।