ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাই-বোন হত্যা, মামা আটক

প্রকাশিত: ৯:২৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৬, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে দুই স্কুলশিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় মামা বাদল মিয়াকে (৪০) আটক করেছে পুলিশ। বুধবার ভোরে রাজধানী ঢাকার গোড়ান এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।

এর আগে ২৪ আগস্ট রাতে উপজেলার সলিমাবাদ গ্রামের প্রবাসী কামাল মিয়ার পুত্র ও কন্যাকে ঘরের ভেতর কলাকেটে হত্যা করা হয়। ওইদিন নিহতদের মামা বাদল মিয়া ওই বাড়িতে অবস্থান করছিল। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি উধাও হয়ে যান।

অর্থের লেনদেন নিয়ে বিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি হত্যাকাণ্ড। জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, এ ঘটনায় মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

ঘটনার রাতে প্রবাসী কামাল মিয়ার বাড়ির খাটের নীচ থেকে তার দুই সন্তানের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শিপা আক্তার (১৪) বাঞ্ছারামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও কামরুল সলিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, দ্বিতল বিশিষ্ট বাড়িটিতে প্রবাসফেরত কামাল তার স্ত্রী, দুই কন্যা ও পুত্র ছাড়া কেউ থাকত না। কামাল গত ১০ ফেব্রুয়ারি দেশে আসে। বেশ কিছুদিন ধরে কামালের শ্যালক বাদল মিয়া এ বাড়িতে অবস্থান করছিল। বাদলের বাড়ি কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খাদেরপুর গ্রামে। একটি মারামারির মামলায় আসামি হওয়ায় বোনের বাড়িতে সে আত্মগোপনে ছিল।

বাদল মিয়া তার বোনদের কাছ থেকে বিদেশ যাওয়ার জন্য ১৪/১৫ লাখ টাকা ধার নেয়। এরপর কিছুদিন বিদেশ থাকে। বিদেশে গিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করবে এমন আশ্বাস দিয়েই টাকা ধার নেয়। সম্প্রতি লকডাউনের কারণে বিদেশ থেকে চলে আসার পর তার বোনেরা জানতে চাইলে সে জানায় আবার বিদেশ চলে যাবে। সেখানে ঝামেলা হয়েছে তাই দেশে এসে পড়েছে। পরবর্তীতে ধার-দেনা মিটিয়ে দেবে। তার নিকটআত্মীয় মোঃ আসিফ এসব তথ্য জানায়।

আসিফ মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্ত করতে আসার পর স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, সোমবার কামাল মিয়াকে ৩ লাখ টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল বাদলের। এদিন রাতেই কামাল মিয়ার দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটলো। সেদিন বাদলও বাড়িতে অবস্থান করছিল। ওই বাড়ির দুটি কক্ষের খাটের নীচে নিহতদের মরদেহ পাওয়া যায়। তাদের হাত-পা বাঁধা ছিল।

সূত্র বলছে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কাটা হয়। হত্যা নিশ্চিত করতেই এমনটি করা হয়েছে। আর শরীরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আঘাতের বেশ কিছু চিহ্ন। ঘটনার পর থেকে মামা বাদল পলাতক ছিলো। শিশু কামরুল হাসানের মরদেহ যে কক্ষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে সে কক্ষেই অবস্থান করতো তার মামা বাদল। সন্ধ্যার পর উচ্চস্বরে সাউন্ড বক্সে গান বাজানোর শব্দ শুনেছে প্রতিবেশীরা।

হত্যাকাণ্ডের পর বাঞ্ছারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন জানিয়েছিলেন, ঘটনার পর থেকে মামা বাদল মিয়া পলাতক। তাকে আটক করা গেলেই হত্যার প্রকৃত রহস্য বের হয়ে আসবে।

পুলিশ সুপার মোঃ আনিসুর রহমান জানিয়েছিলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এর রহস্য উদঘাটন করা হবে।