লালন হত্যার আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

প্রকাশিত: ৫:২০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৭, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক ; মানিকগঞ্জের সিংগাইরে মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ দেওয়ানের ছেলে লালন দেওয়ান হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার স্বজনরা।

শুক্রবার বেলা ১১টায় মানিকগঞ্জ প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা সঠিক সময় পদক্ষেপ নিলে লালন দেওয়ান হত্যাকাণ্ডের শিকার হতো না।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নিহত লালন দেওয়ানের ভাই হালিম দেওয়ান।

এ সময় মামলার বাদি লালনের স্ত্রী মমতাজ বেগম, মেয়ে তৃষা দেওয়ান ও ছেলে শিবাহ দেওয়ানসহ স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সিংগাইরে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী প্রতিবেশী খন্দকার উজ্জ্বল বাঁশ ঝাড়ে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার ইয়াবা লুকিয়ে রাখে। ওই মাদক খোয়া যাওয়াতে উজ্জ্বল লালনকে সন্দেহ করে। লালন দেওয়ান ওই মাদক সম্পর্কে কিছুই জানেনা জানানোর পর উজ্জ্বল মাদকের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। এর জের ধরে গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘোনাপাড়া এলাকা থেকে আসামি উজ্জ্বল, তার ভাই অনিক, করম আলী, ফাহিম, সোহান, আলী হোসেনসহ আরও ৪/৫ জন লালন দেওয়ানকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরের দিন ২৭ জুন পারিল খৈয়ামুড়ি এলাকায় লালনের লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় সিংগাইর থানায় মামলা দায়ের হলেও এখন পর্যন্ত মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

নিহত লালন দেওয়ানের মেয়ে তৃষা দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, মাদক ব্যবসায়ী উজ্জ্বলের সঙ্গে এসআই মামুনের ভালো সর্ম্পক আছে। তার বাবাকে যেদিন অপহরণ করা হয়েছিল, ওই দিনই পুলিশের কাছে বিষয়টি বলার পর পুলিশ কোন গুরুত্ব দেয়নি। অনেক অনুরোধের পর এসআই মামুন আসামি ফাহিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তখন আসামি ফাহিম জানান উজ্জ্বল খন্দকার লালন দেওয়ানকে নিয়ে গেছে। পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিলে তার বাবাকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব ছিলো।

মামলার বাদি নিহত লালন দেওয়ানের স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, উজ্জ্বলের মাদক খোয়া যাওয়ার পর তাদের ওপর সে চাপ প্রয়োগ করে। উজ্জ্বল মেয়রের আত্মীয় হওয়ার কারণে বিষয়টি সিংগাইর পৌর মেয়র খোরশেদ আলম জয়কে জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন উজ্জ্বল মাদকের বিষয় নিয়ে কোন ধরনের চাপ প্রয়োগ করবে না। কিন্তু তার স্বামীকে হত্যার পর মেয়র বলেছেন তিনি উজ্জ্বলকে এ বিষয়ে কিছুই বলেননি।

তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, মেয়র খোরশেদ আলম জয় যদি সঠিক সময় উজ্জ্বলকে বলতেন তবে তার স্বামী হত্যাকাণ্ডের শিকার হতো না। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের প্রায় দেড় মাস হলেও পুলিশ মূল আসামিদের গ্রেফতার করতে পারেননি। আসামির আত্মীয়-স্বজনরা টাকার বিনিময়ে মামলা উঠিয়ে নিয়ে আপোষের জন্য চাপ দিচ্ছে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

বর্তমানে দৌলতপুর থানায় কর্মরত থাকা পুলিশের এসআই আল মামুন জানান, গত ২৬ জুন রাতে লালনের স্ত্রী ও স্বজনরা সিংগাইর থানায় এসে জানান ফাহিম দেখেছে লালনকে ডিবি পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। পরে ফাহিমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে ফাহিম জানান গাড়িতে উজ্জ্বল খন্দকার ছিলো। এ সময় তারা লালনকে ওই গাড়িতে তুলে নিয়ে গেছে। তবে গাড়িতে ডিবি না র‌্যাব ছিল তা ফাহিম জানাতে পারেনি। তাৎক্ষণিক জেলা ডিবি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনার সঙ্গে ডিবির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। পরে লালনের স্বজনদের সাভার র‌্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছি। উজ্জ্বলের সঙ্গে তারা যে সম্পর্কের অভিযোগ তুলেছে তা সত্য নয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিংগাইর থানার এসআই নজরুল ইসলাম জানান, আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর এজাহারভুক্ত আসামি আলী হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া স্বীকারোক্তির পর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত জুয়েল, পিয়াল হাসান ও অপহরণ কাজে ব্যবহৃত গাড়ির চালক সাঈদকে গ্রেফতার করা হয়। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মূল আসামিসহ অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।