রাজশাহীতে ‘রয়েল চিটিং গ্রুপের’ ৪ প্রতারক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৯:৩৬ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : রাস্তায় মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে নিজেদের বিপদের কথা বলে বিদেশি অর্থ বা সোনার গহনা সস্তায় বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল তাদের পেশা। এভাবে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রতারণার মাধ্যমে বোকা বানিয়ে তারা হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকা। আর সেই প্রতারক চক্রের ৪ জন সদস্যকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া থানা কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগীর বরাত দিয়ে বোয়ালিয়া থানা কর্তৃপক্ষ জানায়, মহানগরীর পাঠানপাড়া এলাকার কামরুল হাসান (৫৮) গত ৯জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে ওষুধ কিনতে যাবার পথে বর্ণলীর মোড়ের পেছনে ‘রয়ের চিটিং গ্রপ’ এর একজন প্রতারক তাকে ১০০ সৌদি রিয়াল হাতে ধরিয়ে দিয়ে মানি চেঞ্জারে ভাঙিয়ে পরের দিন দিতে অনুরোধ করে। কামরুল হাসান ওই রিয়াল পরের দিন সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টের কাছে অবস্থিত হাসান মানি চেঞ্জারে গিয়ে ভাঙিয়ে ওই প্রতারক চক্রের সাথে যোগাযোগ করে ও উক্ত অর্থ বুঝিয়ে দেয়। তখন প্রতারক চক্র তাকে ৪০০ টাকা লাভ দেয়।

এরপর প্রতারক চত্রটি আবারো কামরুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করে জানায় তাদের কাছে বাংলাদেশি ৩ লক্ষ টাকা সমমূল্যের সৌদি রিয়াল আছে। ১৪ জুলাই তারিয়ে তারা কামরুল হাসানকে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে হেতেমখাঁ কলাবাগান এলাকায় আসতে বলে। কথা মতো ৩লক্ষ টাকা নিয়ে প্রতারক চক্রের হাতে তুলে দেন কামরুল হাসান। বিনিময়ে তারা একটি লাল রঙের গামছয় মোরানো পুটলা ধরিয়ে দিয়ে বলে এতে কাঙ্খিত রিয়াল আছে। কামরুল হাসান বাড়ি ফিরে এসে ওই পুটলা খুলে দেখে তাতে রিয়াল নেই, আছে শুধু খবরের কাগজের ছেড়া টুকরো।

পরবর্তিতে বোয়ালিয়া থানায় অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী কামরুল হাসান।

মহানগর পুলিশের মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, গ্রেফতার চারজন ‘রয়্যাল চিটিং গ্রুপের’ সদস্য। গত বৃহস্পতিবার রাতে মহানগরীর বর্ণালী মোড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে সৌদি আরবের ১০০ রিয়ালের তিনটি নোট এবং দুটি গামছায় বিশেষ কায়দায় রাখা কিছু খবরের কাগজ উদ্ধার করা হয়েছে। খবরের কাগজগুলো তারা সৌদি রিয়াল হিসেবে দিয়ে প্রতারণা করতো। এদের গ্রেফতারের সময় দুইজন পালিয়ে গেছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, গোপালগঞ্জ জেলার মোকসুদপুর থানাধীন ঘুনসী মধ্যপাড়া এলাকার আফছার তালুকদারের ছেলে আলমগীর হোসেন (২৯), ঘুনসী দক্ষিনপাড়া এলাকার মৃত ছহেদ সরদারের ছেলে লুৎফর সরদার (৩৫), বামনডাঙ্গা এলাকার মৃত মাজেদ শেখের ছেলে বখতিয়ার হোসেন (৫১) ও ব্যাটক্যামারী এলাকার মৃত গুনজর আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৩২)।

পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চার প্রতারক জানিয়েছেন, সম্প্রতি প্রতারণা করে তারা প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সৌদি রিয়াল ছাড়াও তারা সোনার গয়না বলে নকল গয়না কিংবা নকল সোনার বার দিয়ে থাকেন। প্রতারকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাদের ভাড়া বাসায় তল্লাশি চালিয়ে প্রতারণা করে নেয়া টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার রশিদ উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রতারকরা প্রতারণার মাধ্যমে সংগ্রহ করা টাকা তাৎক্ষণিকভাবে আত্মীয়-স্বজন এবং নিজেদের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা দিতেন। বিকাশের মাধ্যমেও টাকা পাঠিয়ে দিতেন। জমা রাখতেন নিজেদের ব্যাংক হিসাবেও। সেসব টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

পরে তারা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পুলিশের কাছে। প্রতারক চক্রটি জানায়, এভাবে তারা এপর্যন্ত বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে বলে জানান মহানগর পুলিশের ওই কর্মকর্তা।