করোনাযুদ্ধে প্রথমসারির যোদ্ধা অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালি সেন

প্রকাশিত: ২:০০ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২০
করোনাযুদ্ধে প্রথমসারির যোদ্ধা অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালি সেন

আতিয়ার রহমান,খুলনা : দেশের মানুষ যখন করোনার প্রকোপে আক্রানÍ, ঠিক তখনই জনসাধারণের জন্য সম্মুখযুদ্ধে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন নারী পুলিশ কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে একজন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালি সেন। তিনি ২০০৩ সালে ৩০তম বিসিএসে পুলিশে যোগদান করেন।

করোনার প্রথম থেকেই খুলনায় করোনা আক্রান্ত এলাকায় নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আসছেন। তিনি বলেন, ‘কখনই নিজেকে একজন নারী হিসেবে মনে করিনি, মানুষ হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। কাজের মধ্যে কোন ছেলে-মেয়ে নেই। তাই নিজেকে কখনো নারী বলে দুর্বল মনে হয়নি।’ তার মতে, দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার অবস্থাও বিবর্ণ। ফলে এই মুহূর্তে নিজেকে দেশের মানুষের সেবাকে একমাত্র ব্রত বলে মনে করেন তিনি। খুলনার দৌলতপুর এলাকাসহ আরও তিনটি এলাকায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন করোনার শুরু থেকে।

সোনালি সেনের কর্তব্যরত এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে অসহায় ও বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা ত্রাণ দরিদ্র মানুষের মধ্যে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। কী রাত, কী দিনÑ পুলিশ কর্মকর্তাদের চব্বিশ ঘণ্টাই কাজ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ খুব বেশি সচেতন নয়। এ কারণে লকডাউন নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জও বটে।

ফলে সামাজিক দূরত্ব যদি বজায় থাকে, তা হলে দোকানপাট থেকে শুরু করে অন্যান্য জায়গায় মানুষ যেন জমায়েত হতে না পারেÑ এদিকেও আমাদের নজর রাখতে হয়েছে। কাজটি সহজ মনে হলেও অত্যন্ত কঠিন। মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যসামগ্রী ব্যবহারে নিশ্চিতকরণ, আক্রান্তের তথ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজে আমরা নিয়জিত ছিলাম। এ রকম মহৎ কাজ করতে গিয়ে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাও করনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ জন্য সমাজে এখন তাদের অবস্থাও অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে।

তার পরও তারা কাজ করে যাচ্ছেন দেশের মানুষের সেবা দেওয়ার জন্য।’ তিনি মনে করেন, এ দেশের প্রত্যেক মানুষের দেশের অন্যান্য মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। তিনি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে চান। সোনালি সেনেরও আছে পরিবার। এ কারণে সারাদিন দায়িত্ব পালন করেও নিজেকে একটু আলাদা রাখতে হয় অন্য সদস্যদের কাছ থেকে। তাই তিনি মনে করেন, বাইরের মানুষের সঙ্গে নিজের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এই সময় বাইরে কাজ করে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তাদের থেকে দূরত্ব রেখে চলাও মানসিক একটা চাপ তৈরি করে। তার পরও দিন শেষে ‘একতাই শান্তি স্লোগানে তিনি দেশের মানুষের হয়ে কাজ করছেন। এত ঝামেলার মধ্যেও পরিবারের দেখাভাল করে যাচ্ছেন। ছোটবেলা থেকে প্রতিটি কাজে তিনি আত্মবিশ্বাসী। পুলিশের যোগদানের আগে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছেন। পরে তার কাছে পুলিশে আসাটাও অসম্ভব মনে হয়নি।

সোনালি সেনের মতে, দেশের অনেক শিক্ষিত মেয়ে আছেনÑ যারা অনেকেই তাদের পরিবারে অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু তাদের নারী হিসেবে না ভেবে মানুষ হিসেবে ভাবতে শিখতে হবে। তা হলেই তাদের অধিকার নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন তিনি। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সোনালি সেন যায়যায়দিনকে বলেন,আমি জিবনের ঝুঁকিনিয়ে এই মহামারি করোনা ভাইরাস কাজ করছি এবং সারাজিবন মানুষের জন্য কাজ করে যাব তাতে যদি আমার মৃত: হয় তবু ও আমি মানুষের কল্লানে কাজ করব।