অনলাইনে কোরবানীর পশু বিক্রির উদ্যোগ গাজীপুরে

প্রকাশিত: ৭:৫৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এবার অনলাইনে কোরবানীর পশু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে জেলার ৫টি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাগণ, জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ডেইরী মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম।
এর ফলে কোরবানীর পশু ক্রয় করতে ইচ্ছুক গ্রাহকদের বাজারমুখী প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। পশু বিক্রয়কারী মালিকদের বিক্রয় মন্দার শংকা দূর হবে বলে আশা করছেন কর্তৃপক্ষ ।

এদিকে, করোনার কারণে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে গাজীপুরের স্থায়ী গবাদি পশুর
হাট জমতে শুরু করেছে। তবে এসব হাটে প্রশাসনের নির্দেশমতো ক্রেতা ও বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে এসব হাটে।

জেলা প্রশাসক জানান, করোনার কারণে অনেক সচেতন ক্রেতারা এবার বাজারমুখী কম হবে। অন্যান্য বছরের মত গবাদি পশুর বাজার এবার জমবে কি না – এ শংকা দেখা দিয়েছে বিক্রেতাদের মধ্যে। ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা- উভয়ের কথা চিন্তা করে আমরা অনলাইন প্লাটফর্মে পশু বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। গবাদী পশুর খামারীদের যেসব সংগঠন রয়েছে, তাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে।

তিনি জানান, অনলাইনে বিক্রির জন্য প্লাটফর্ম রেডি আছে। বিক্রেতারাও তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ বা সামাজিক যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে তাদের পশুর ছবি আপলোড করবে। আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করবো। তাদেরকে প্রমোট করার জন্য বা প্রচারণার ব্যবস্থা করবো। পশুর ওজন অনুযায়ী আমরা একটা দামও নির্ধারণ করে দেব যাতে ক্রেতা ও বিক্রেতা কেউ প্রতারিত না হয়।

জেলা প্রশাসক আরও জানান, করোনার সংক্রমণ রোধে স্থানীয় বাজারগুলোতে নজরদারী করতে ইতিমধ্যেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। যেসব বাজারে পশু বিক্রি হবে তারা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাজার পরিচালনা করবেন অন্যথায় সেসব বাজার বন্ধ করে দেয়া হবে।

গাজীপুর জেলা বাজার কর্মকর্তা ও সিটি কর্পোরেশনের দেয়া তথ্য মতে, জেলায় প্রায় ৪ শতাধিক বাজার থাকলেও জেলার পাঁচটি উপজেলায় প্রায় অর্ধশত স্থায়ী বাজারে সপ্তাহে এক দিন করে গবাদি পশুর হাট বসে। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশনের গাজীপুর ও টঙ্গীতে দুটি বড় ধরনের স্থায়ী বাজার থাকলেও ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে আরও ১০টি
অস্থায়ী বাজার সৃষ্টি করা হচ্ছে। অস্থায়ী বাজারগুলো সাধারনত ঈদ-উল-আযহার কয়েকদিন পূর্ব থেকেই বসে। করোনার সংক্রমণের কারণে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর স্থায়ী বাজারগুলোতে পশু বেঁচাকেনা শুরু হয়েছে।

গাজীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা দিপক রঞ্জন রায় জানান, জেলায় ৬ হাজার ৮৬৮ জন খামারী ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে তাদের গবাদি পশু বিক্রির উপযোগী করে তুলছেন। এর মধ্যে গরু ৬১ হাজার ১৫০টি,
মহিষ ৪০ হাজার ৬৩৫টি এবং ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে ২০ হাজার ৯১৫টি রয়েছে। অপরদিকে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার পশুর। তবে গাজীপুরে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত পশু মজুদ রয়েছে মালিকদের কাছে। তারপরও দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষক বা খামারী গাজীপুরে তাদের পশু বিক্রি করতে আসেন। এবার করোনার সংক্রমণের কারণে বাজারে তাদের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তাই সার্বিক দিক লক্ষ্য রেখে খোলা জায়গায় বেশি বেশি বাজার সৃষ্টি দরকার। তাহলে হয়তো স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে।

কয়েকজন খামারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, বাজারে যদি করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয় তাহলে যেমন ক্রেতা আসবে না তেমনি বিক্রেতারাও আসবে না। ফলে খামারীরা লোকসানের সম্মুখীন হবে। তাই এখনই প্রশাসনের নজরদারী বাড়াতে হবে বাজারগুলোতে, যাতে সবার আস্থা ফিরে আসে।

শ্রীপুরের ভাই ভাই ডেইরী নামের একটি খামারের পরিচালক আবু সাইদ জানান, তিনি প্রতি বছর প্রায় শতাধিক গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যবসা করে থাকেন। এবারও তার প্রায় ৭০টি গরু বিক্রির উপযোগী করে তুলেছেন। তার মতে, পশুর বাজারের স্থান যেমন সীমাবদ্ধ থাকে, তেমনি সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। অন্ততপক্ষে
এখানে স্বাস্থ্যবিধি মানা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এবার কোন পশুই বাজারে না নেয়ার সিদ্ধান্ত তার। খামার থেকেই তিনি তার পশুগুলো বিক্রি করবেন।

এদিকে, গবাদি পশু ব্যবসায়ী ও ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাজীপুরের গবাদি পশুর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবহনযোগে পাইকাররা পশু বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। এ জন্যই করোনা সংক্রমণের একটি ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। অনলাইনে পশু বিক্রির যে উদ্যোগ জেলা প্রশাসন নিয়েছেন এ বিষয়ে তারা জানান, এর সফলতা নিয়েও প্রশ্ন আছে তাদের।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা নুরুজ্জামান মৃধা জানান, করোনার কারণে এবার ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সংক্রমণ রোধে তাই ঈদ-উল-আযহায় বাজারের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছে। অস্থায়ী বাজারগুলো এখনও শুরু হয়নি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে বাজার পরিচালনা করা হয় সে জন্য ইজারাদারদের শর্ত দেয়া হবে। এছাড়াও সিটি
কর্পোরেশন থেকে নজরদারীও করা হবে।