প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রকৃতি, গড়ে উঠছে প্রাণীর অভয়ারণ্য

প্রকাশিত: ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়ালের শালবন। নানা প্রজাতির উদ্ভিদের পাশাপাশি এই বনে কয়েক দশক পূর্বেও বাস করতো বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী। কিন্তু স্থানীয় মানুষ দিন দিন প্রকৃতির বিরুপ পরিবেশ তৈরি করায় নানা উৎসের আবাসস্থল এই বন কিছুদিন আগেও হুমকীর মুখে পড়েছিল।
২০১১ সালে সরকার এই বনকে পূর্বের উৎসে ফিরিয়ে এনে মানুষের বিনোদনের জন্য শালবনের ৩ হাজার ৮১০ একর ভূমি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক গড়ে তোলেন। সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর পার্ক কর্তৃপক্ষের অক্লান্ত পরিশ্রমে দীর্ঘদিন পর পূর্বের অবস্থানে ফিরে এসেছে পার্ক এলাকার পরিবেশ। করোনাকালের এই সময়ে এই পার্কটিতে যেমন প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেয়েছে তেমনি দেশি বিদেশি পাখপাখালির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

গত ৩ মাস ধরে এই পার্কে দর্শণার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকলেও হঠাৎ নিরব হয়ে যাওয়া এই পার্কটি এখন পাখ পাখালির কিচির মিচির শব্দে মুখর করে রাখছে প্রতি মুহুতর্কে।

পার্ক কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, বিশাল এই সাফারী পার্কের কিছু এলাকা দর্শণার্থীদের জন্য সাফারী জোন তৈরি হলেও পার্কের প্রায় ২৬ কিলোমিটার সীমানা প্রাচীর এলাকার মধ্যে রয়েছে। যেখানে স্থানীয় মানুষের আনাগোনা ছিল। প্রকৃতির পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীরা বসবাসের উপযোগী পরিবেশ হারিয়েছিল এসব এলাকায়। সম্প্রতি পুরো এলাকাটি নজরদারীতে আনা হয়। বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর প্রাকৃতিক খাবারের যোগানের জন্য এসব এলাকায় প্রায় শতাধিক প্রজাতির বিলুপ্ত ও বিপন্ন জাতের ২০ হাজার উদ্ভিদ রোপণ করা হয়েছিল। আর এতেই পরিবেশ ও প্রকৃতি যেন গর্জে উঠে। এই বর্ষায় উদ্ভিদগুলো বেড়ে উঠতে ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। ফল দেয়া শুরু করেছে নানা প্রজাতির বৃক্ষগুলো। পার্কের বিশাল এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রাকৃতিক জলাশয় ও নালাগুলোতে মাছ শিকারে প্রতিনিয়ত আসছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। পার্কের গাছে গাছে ঝুলছে পাখীদের বাসা। নিরাপদ পরিবেশে ব্যাপক প্রজননে পার্কটি এখন পাখীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান জানান, জাতির পিতার নামে এই বিনোদন কেন্দ্রটিকে প্রকৃতি ও পরিবেশ ঠিক রেখে আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তুলতে সরকার আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। মুজিববর্ষকে সামনে রেখে এই পার্কটিকে বন্যপ্রাণের পূর্বের অস্তিত্ব ফিরিয়ে আনতে নানা প্রজাতির বৃক্ষ দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয়েছিল। ধারণা ছিল প্রাকৃতিক পরিবেশে বন্যপ্রাণীর খাবারের যোগান, তাদের নিরাপত্তা ও বসবাসের উপযোগী পরিবেশ তৈরী করলেই ঝাঁকে ঝাঁকে প্রাণী আসবে। তাদের বংশ বৃদ্ধি পাবে। আমরা সেই পরিবেশটিই রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে। আর এমন একটি করোনার সময়ে পার্কটিতে দর্শণার্থীদের প্রবেশ বন্ধ হওয়ায় প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীরা অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে। পার্কটির বিশাল এলাকা কাজে লাগানোর পাশাপাশি প্রতি বছর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ করে প্রকৃতিকে বিশ্রাম দিতে কিছুদিনের জন্য দর্শণাথীদের প্রবেশ বন্ধ রাখা প্রয়োজন।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা আশরাফ উদ্দিন জানান, করোনার এই সময়ে দীর্ঘ কয়েক মাস প্রকৃতি বিশ্রামে থেকে নতুন ভাবে জেগে উঠেছে। এর মাধ্যমে এই মহামারী আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে প্রকৃতির বিশ্রাম প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক নিয়মে যেখানে মানুষের আনাগোনা কমবে সেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ বা বন্যপ্রাণীর আনাগোনা বৃদ্ধি পাবে। সাফারী পার্কে দর্শণার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় সেখানে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীরা বসবাসের উপযোগী পরিবেশ পাচ্ছে। তাই দলে দলে তারা এসে অভয়ারন্য তৈরি করছে। সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশও প্রাণ ফিরে পেয়েছে।