ভূরুঙ্গামারীতে দুধকুমার-কালজানি নদীতে ভাঙ্গণ

প্রকাশিত: ৮:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৬, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে একদিকে করোনা ও অন্যদিকে নদী ভাঙ্গণের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছেন ভাঙ্গণকবলিত এলাকার মানুষ। বসতভিটা, বাঁশ ঝাঁড়, গাছ-বাগান ও আবাদী জমি চলে যাচ্ছে নদীগর্ভে। বসতভিটা হারিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান খুঁজছেন এসব এলাকার মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিলখুড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম ঢলডাঙ্গা ঘাটপার, দক্ষিণ ঢলডাঙ্গা চারমাথা এলাকা ও কালজানি ঘাটপার এলাকায় কালজানি নদীতে প্রচন্ড ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। হুমকীর মুখে পড়েছে, একটি বাজার, বিজিবি ক্যাম্প, দুটি প্রাইমারী স্কুল, একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসাসহ বহু স্থাপনা।

ভাঙ্গণের শিকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব মিজানুর রহমান, হাজী আ. রশীদ ও আব্দুল হালিম জানান, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ওগুলোও হয়তো হারিয়ে যাবে নদীগর্ভে। অতি দ্রুতই হয়তো ভেঙ্গে যাবে সামনের ইউনিয়ন সদরের বাজারটিও।

অপরদিকে, দুধকুমার নদের ভাঙ্গণে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নলেয়া, চরভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ইসলামপুর, পাইকেরছড়া ইউনিয়নের গছিডাঙ্গা, পাইকডাঙ্গা,সোনাহাট ব্রীজের পশ্চিমপাড়, বলদিয়া ইউনিয়নের হেলডাঙ্গা ও আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের ধাউরারকুঠিসহ বিভিন্ন এলাকার শত শত বিঘা আবাদী জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

কয়েকদিনের ভাঙ্গণে নদীগর্ভে চলে গেছে ইসলামপুরের একটি মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ ও শতাধিক ঘরবাড়ি। হুমকির মুখে পরেছে দক্ষিণ চরভূরুঙ্গামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইসলামপুর থেকে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা সদরগামী একমাত্র পাকা রাস্তাটি।

বসতভিটা হারিয়ে ইসলামপুর গ্রামের খোদেজা বেগম ও নুরজাহান খাতুন গালে হাত দিয়ে
বসে ছিলেন নদীর পাড়ে। তারা বলেন, ”হামার সউক গেইছে বাহে। নদী হামাক ফকির বানে দিছে। (আমার সব গেছে ভাই। নদী আমাকে ফকির বানিয়ে দিয়েছে।)”

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা), আলোকিত ভূরুঙ্গামারী ও দুধকুমার নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শাহানারা বেগম মীরা বলেন, ‘আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ভাঙ্গণ কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করেছেন। তাদের নির্দেশ মোতাবেক স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’

শিলখুড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন ইউসুফ আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘ভাঙ্গণের কবলে পড়া মানুষের কি যে যন্ত্রণা তা আসলে কাউকে বোঝানো যায়না। সহ্য করা যায়না ওদের কষ্ট। কালজানি নদীর দুই পারে দুটি বাঁধের দাবি বহু দিনের। বহুবার আমি উপজেলা পরিষদের কাছে আবেদন করেছি। সর্বশেষ ০৩ জুন একটি আবেদনের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের সমন্বয় কমিটির সভায় দক্ষিণ ধলডাঙ্গার কালজানি নদীর ঘাটপাড় ভাঙ্গণ প্রতিরোধ কল্পে একটি প্রস্তাব পেশ করে তা গ্রহণের জন্য সকলের সুদৃষ্টি কামনা করেছি।’

চরভূরুঙ্গামারী ইউপি চেয়ারম্যান এ টি এম ফজলুল হক বলেন, ‘ইতিপূর্বে নদী ভাঙ্গণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে নদী ভাঙ্গণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। আবার ভাঙ্গছে। আবারও কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এবার দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা করছি।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সমন্বিত পরিদর্শন শেষে নদী শাসনের জন্য একটি প্রস্তাব ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আপাতত দুই পাড়ের জনগণের পারাপারের সুবিধার্থে ঘাট উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়নাধীন। এছাড়াও কালজানি ও দুধকুমার নদের ভাঙ্গণ রোধে ‘দুধকুমার নদ উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে
একটি প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরুজুল ইসলাম বলেন, ‘নদী ভাঙ্গণ এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করি দ্রুতই একটি সমাধান দৃশ্যমান হবে।’