গৌরীপুরে হতদরিদ্র ভ্যান চালকের ছেলে সামছুল পেয়েছে গোল্ডেন জিপিএ-৫

প্রকাশিত: ৪:৫৯ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০২০

কমল সরকার’গৌরীপুর : ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গজন্দর গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক রফিকুল ইসলামের ছেলে মেধাবী মো. শামছুল আলম জিপিএ-৫ পেয়ে দরিদ্রতার অন্ধকার গৃহে আলো জ্বালিয়েছে। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ময়মনসিংহের গৌরীপুর আর.কে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় সে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।

পরিবারে অভাব অনটনে ও শত প্রতিকূলতার বাধা পেড়িয়ে শামছুল তার মেধা বিকাশে আজ বিজয়ী বীর। তার ইচ্ছা সে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হবে। কিন্তু এ স্বপ্ন পূরণের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার হতদরিদ্রতা। গৌরীপুর উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে গজন্দর পূর্বপাড়া গ্রামে শামছুল ইসলামের বাড়ি। তিন শতক জমির উপর জরাজীর্ণ টিনের ঘরে তাদের ৬ সদস্যের পরিবারের বসবাস। ঝাঝড়া টিন ভেদ করে বৃষ্টির পানি বাহিরে পড়ার আগে তাদের ঘরে পড়ে। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে সেই ঘরের চালের ফুটোতে পলিথিন দিয়ে আচ্ছাদন দেয়া হয়েছে।

সামছুল তিন ভাই এক বোনের মাঝে সবার বড়। ছোট ভাই নাজমুল ইসলাম আগামী বছর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। অপর ভাই সিরাজুল ইসলাম ও বোন জান্নাতুল ইসলাম মাদরাসায় পড়ে। ভ্যানচালক বাবা রফিকুল ইসলাম ভ্যান চালিয়ে যা রোজগার করে তাতে ৬ সদস্যর পরিবারের খেয়ে না খেয়ে খুব কষ্টে চলে তাদের সংসার। দাদা আব্দুল জলিলের মুক্তিযোদ্ধার ভাতার টাকায় চলে চার সন্তানের লেখাপড়ার খরচ।

অভাব অনটন ছিল শামছুল ইসলামের নিত্যসঙ্গী। প্রায় দিনেই সকালে কিছু না খেয়েই স্কুলে যেতো সামছুল। তার মাত্র একটি স্কুল ড্রেসে কেটে গেছে দু’বছর। প্রাইভেট পড়ার সামর্থ্য না থাকায় সিনিয়র ছাত্রদের কাছ থেকে পড়া শিখে নিতো সে। শুধু এসএসসি পরীক্ষার আগে স্থানীয় একগৃহ শিক্ষক তাকে তিন মাস ফ্রিতে প্রাইভেট পড়িয়েছেন।

এতসব প্রতিকূল পরিবেশের মাঝেও সামছুল এসএসসিতে সাফল্য অর্জন করে। এর আগে জেএসসিতে জিপিএ-৫ পায় শামছুল। তার এ সাফল্যে পরিবারের সবাই খুশি হলেও ভবিষ্যতের লেখাপড়ার খরচ নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে সামছুলের হতদরিদ্র পরিবারের। শামছুলের বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, ভিটের জমিটুকু ছাড়া তার আর কোনো জমি নাই। সারাদিন ভ্যান চালানোর আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের দু’বেলা খাবারই জোটে না।

সন্তানদের লেখাপড়ার যোগান দিবে কি করে? তিনি বলেন, শামছুলের এ কৃতিত্বের পেছনে অবদান আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিলের। তিনি চার নাতিকে উচ্চ শিক্ষিত হিসেবে গড়ে তুলতে চান। তাই নিজে একটি বাঁশের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে তার পাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতার সব টাকা খরচ করছেন নাতিদের লেখাপড়ার পেছনে। শামছুলের মা কমলা খাতুন বলেন, অভাব-অনটনের কারণে কোনো সময় আমার ছেলেকে প্রয়োজনীয় বই-খাতা’ ভালো খাবার ও পোশাক দিতে পারিনি আমরা।

নানা সংকটে অনেক কষ্ট সহ্য করে ছেলের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বপ্ন শামছুল উচ্চ শিক্ষা লাভ করে প্রতিষ্ঠিত হয়ে পরিবারের হাল ধরবে একদিন। এদিকে শামছুলের সাফল্যে তার দাদা আব্দুল জলিল সবচেয়ে বেশি খুশি হলেও নাতির ভবিষ্যতের লেখাপড়া নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

আব্দুল জলিল জানান, নিজের ভিটের জমি ছাড়া আর কোনো জমি নেই তার। তার একমাত্র আয়ের উৎস হচ্ছে সরকারের দেয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। আর এ ভাতার টাকা তিনি ব্যয় করে আসছেন চার নাতির লেখাপড়ার পেছনে। এজন্য তাকে বৃদ্ধ বয়সে ঝুপড়ি ঘরে অতিকষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে। এতে তার মনে কোনো কষ্ট নেই। শামছুল ইসলামের উচ্চ শিক্ষা লাভের স্বপ্ন পূরণে সবার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। শামছুল ইসলাম বলেন, আমি ময়মনসিংহ সদরের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হতে চাই।

শিক্ষা জীবন শেষে একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই তার প্রধান লক্ষ্য। আমাদের প্রত্যাশা দরিদ্র মেধাবী সামছুল তার লক্ষ্যে পৌঁছে পরিবারের স্বপ্ন পূরন করবে একদিন। ঘুছাবে তার পরিবারের দরিদ্রতা।