শ্রীমঙ্গলে চা পাতার নিলাম শুরু

প্রকাশিত: ১:৩২ অপরাহ্ণ, জুন ৫, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : প্রথমবারের মতো শুধুমাত্র মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ব্রোকার হাউজ দ্বারা সম্পন্ন হয়েছে চলমান চা পাতার মৌসুমের প্রথম অকশন। বুধবার অনুষ্ঠিত নিলামে দেশের নানা প্রান্ত থেকে চা পাতার ক্রেতা ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আর এ অকশনে ঢাকা ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ৩০ জন বিডার অংশ নেন বলে জানান বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক ড. রফিকুল হক।

তিনি জানান, করোনার মর্তে কড়া শতর্কতায় নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে এ অকশন পরিচালিত হয়। অন্যান্য অকশনের চেয়ে এর পরিসর কিছুটা ছোট হলেও এটি শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রের জন্য মাইফফলক। কারণ এই অকশনটি পরিচালনা করে শ্রীমঙ্গলের দুটি ব্রোকার্স হাউজ। যা এ অকশন হাউজ স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল ব্রোকার্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হেলাল আহমদ জানান, করোনার কারণে এ অকশনে চট্টগ্রাম থেকে অন্যান্য ব্রোকার হাউস আসেনি। তাই শ্রীমঙ্গলের দুটি ব্রোকার্স হাউজই তা পরিচালনা করে এবং এই অকশনে বায়ারদেরও স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি ছিলো।

তিনি আরও জানান, তাদের ব্রোকার্স হাউজের নিলামে উত্তোলিত চায়ের ৮০ ভাগই বিক্রি হয়েছে। সর্বোচ্চ ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় শ্রীমঙ্গল ক্লোনেল বাগানের চা।

শ্রীমঙ্গলস্থ টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্ল্যান্টার্স এসোসিয়েশন বাংলাদেশের পরিচালক জহর তরফদার জানান, এসোসিয়েশনের ব্যবস্থাপনায় শ্রীমঙ্গলে দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্রে চলতি মৌসুমের প্রথম নিলাম সম্পন্ন হয়েছে গত বুধবার। এখন থেকে শ্রীমঙ্গল অকসন হাউজে প্রতি মাসে দুটি করে নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দিনের নিলামে ১৮ হাজার ৭শ কেজি চা বিক্রি হয়েছে। আর গড় দর পাওয়া গেছে ২২০ টাকা।

তিনি আরও জানান, শ্রীমঙ্গলের দুটি ব্রোকার্স হাউজের মধ্যে রুপসী বাংলা ব্রোকার হাউজের অফিস শ্রীমঙ্গল আজিজ সুপার মার্কেটে ও শ্রীমঙ্গল টি ব্রোকার্স হাউজের অফিস শ্রীমঙ্গল রামকৃষ্ণ মিশন রোডে। দুটি প্রতিষ্ঠানের নিলাম ডাকে বিডার্সদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ ছিল।

টি ট্রেডার্স অ্যান্ড প্ল্যান্টার্স এসোসিয়েশনের সিনিয়র সদস্য সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে কিছুটা বিলম্বে শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বুধবার অনুষ্ঠিত নিলামে দেশের নানা প্রান্ত থেকে চা পাতার ক্রেতা ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে প্রতি নিলামে চা পাতা উত্তোলন ও বিক্রি বৃদ্ধি হওয়ার আশাবাদী চা সংশ্লিষ্টরা।

শ্রীমঙ্গল চা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি চেরাগ আলী জানান, দেশের ১৬৭টি চা বাগানের মধ্যে শুধূ মৌলভীবাজারেই রয়েছে ৯২টি চা বাগান। এ অঞ্চলের উৎপাদিত চা দু’বছর আগেও চট্রগ্রামের নিলাম কেন্দ্রে নিয়ে বিক্রি করতে হতো। ২০১৭ সালের ০৮ ডিসেম্বর শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে ২০১৮ সালে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।

এসোসিয়েশনের পরিচালক জহর তরফদার আরও জানান, এ বছর চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ বেড়েছে। এই মৌসুমে প্রতি সোমবার চট্টগ্রামে চা নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মাসের প্রথম ও তৃতীয় সপ্তাহের বুধবার শ্রীমঙ্গলে চা নিলাম হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে চট্রগ্রামে মৌসুমের দুটি নিলাম সম্পন্ন হয়েছে। এ বছর চট্টগ্রামে ৪২টি ও শ্রীমঙ্গলে ২০টি চা নিলাম অনুষ্ঠিত হবে।

করোনা ভাইরাসের বন্ধের মধ্যেও দেশের বিভিন্ন বাগানে চা উৎপাদন চালু রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে, পরিমিত বৃষ্টি ও আর্দ্রতা অনুকূলে থাকায় মৌলভীবাজারে চা উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।