আঙ্গুর চাষে সফল শ্রীমঙ্গলের খাসিয়া যুবক

প্রকাশিত: ১২:৪০ অপরাহ্ণ, জুন ৫, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : বাড়িতে এই প্রথম আঙ্গুর ফলের চাষ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার লংলিয়া ছড়া পুঞ্জির খাসিয়া যুবক কেমন পডুয়েং।

জানা গেছে, ৩ বছর আগে শখের বসে জেলার সমশেরনগরের এক নার্সারী থেকে দুটি আঙ্গুর গাছের চারা ক্রয় করে বাড়িতে রোপণ করেন কেমন পডুয়েং। বর্তমানে গাছটিতে প্রচুর পরিমাণে থোকায় থোকায় আঙ্গুর ফল ধরেছে। তবে আঙ্গুরগুলো বেশ টক। এ ফলের চাষ সম্পর্কে ধারণা না থাকায় আঙ্গুরগুলো টক হচ্ছে।

কেমন পডুয়েং জানায়, আঙ্গুর গাছ লাগিয়ে তিনি সফল। এখন শুধু প্রয়োজন কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তা। তাহলেই দূর্গম এই পুঞ্জির পাহাড়ে বাণিজ্যিক ভাবে আঙ্গুর ফলানো সম্ভব হবে। এছাড়া তিনি খাসি পান চাষের সঙ্গে লেবু চাষ করেও বিক্রি করছেন। পাশাপাশি নানা দেশীয় ফলের চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হতে পারেন সহযোগিতা পেলে। ইতিমধ্যে এই যুবকের লাগানো দুটি কমলা গাছে কমলা ধরতে শুরু করেছে। তবে ভালো পরীক্ষা নীরিক্ষার অভাবে পাকার আগে তা ঝড়ে পরে যাচ্ছে। কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ পেলে ফলন ভাল হবে, আর বিক্রি করা সম্ভব। প্রশিক্ষণ পেলে তার দেখা দেখি আরও অনেকেই আঙ্গুর চাষে আগ্রহী হবেন।

আঙ্গুরের পুষ্টি উপাদানে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, বি ১, সি, কে ভিটামিন অন্যতম। এছাড়াও আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাশিয়াম ও খনিজ পদার্থ ম্যাঙ্গানিস। আঙ্গুর শুকিয়ে সাধারণত তৈরি হয় কিশমিশ ও কিশমিশে রয়েছে ৬০ শতাংশ ফ্রুকটোজ।

আমাদের দেশে এ যাবৎ ৩টি উৎপাদনশীল আঙ্গুর গাছের জাত নির্বাচন করা হয়েছে। ১. জাককাউ ২. ব্ল্যাক রুবী ৩. ব্ল্যাক পার্ল।

তিনটি জাতই গ্রীষ্মকালীন ও পরে তিনটি রঙের রূপান্তরিত হয়ে যথাক্রমে হালকা বাদামি, কালো ও করমচা রং ধারণ করে। ফলন আসতে সময় লাগে প্রায় দু’বছর।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের মনিটরিং কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম জাবেদ বলেন, খাসিয়া পুঞ্জির সম্প্রদায়, কৃষি পেশাই তাদের জীবনের মূল উপার্জন তাদের আদি পেশা পান। যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাসি সম্প্রদায় এগিয়ে চলছে। পান চাষের পাশাপাশি সুপারি, কলা, লেবু, আনারস, কমলা, কাঁঠাল, চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে তারা। খাসিয়া পুঞ্জির সম্প্রদায়রা মার্তিতান্ত্রিক ও অত্যন্ত অমায়িক।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি বলেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় নৃ-জনগোষ্ঠী লংলিয়া ছাড়া খাসিয়া পুঞ্জির যুবক আঙ্গুর চাষ করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। যদিও সে আমাদের দেশের চারা লাগায়নি। সে নাকি সমশেরনগরের এক নার্সারী থেকে চারাটি নিয়ে এসে লাগিয়েছে। ফলও প্রচুর ধরেছে, দেখতে সুন্দর কিন্তু একটাই সমস্যা হলো ফলগুলো অনেক টক। এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সে যোগাযোগ করেছে। আমরা বলেছি যে আপনি মাটি পরীক্ষা করান। যেহেতু তার খুব ইচ্ছে বড় আকারের একটি খামার করার।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে ৩ জাতের আঙ্গুর আছে। গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে আমরা দেখবো কি করলে ওই মাটিতে ভালো ও মিষ্টি ফল করা যায়। খাসিয়া যুবক যদি এই বিষয়ে উদ্যোগী হয় তাহলে আমরা সব ধরনের সহযোগীতা করবো। আমি আশা করি লংলিয়া চারাসহ উপজেলার সবখানে এই আঙ্গুর চাষ করতে পারবে। কেমন পডুয়েংকে এখন থেকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেওয়া হবে।