শরণখোলায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ডুবে গেছে ঘরবাড়ি-মৎস্য ঘের

প্রকাশিত: ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুরাতন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে শরণখোলা গ্রামের ১৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি, পুকুর তলিয়ে গেছে।

সড়কের উপর দিয়ে পানি উপচে বাগেরহাট সদরের রহিমাবাদ ও চাঁপাতলা গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। ১৮৬ হেক্টর জমরি বোরো ধান, এক হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমির দণ্ডায়মান ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুবে গেছে বেশ কিছু মৎস্য ঘের, ভেঙ্গে গেছে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা, উপড়ে গেছে বৈদ্যুতিক খুটি। তবে কোথাও কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

বাগেরহাটের বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেয়া ২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদুজ্জামান জানান, বিভিন্ন নদ-নদীতে জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা এলাকায় বলেশ্বর নদী পাড়ের ২৫০ মিটার রিং বাঁধ ভেঙ্গে পানি বগি ও গাবতলা গ্রামে প্রবেশের করে। ইতিমধ্যে বাঁধ মেরামতের সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, বৃহসপতিবার জোয়ারের পর মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। বলেশ্বর নদী পাড়ের ৬২ কি.মি. বেড়িবাঁধের মধ্যে ৬০ কি.মি.র কাজ সমাপ্ত হয়েছে।বাকি ২ কি.মি. বেড়িবাঁধ স্থানীয় জমি মালিকদের স্বত্ব সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ও
তাদের বাধার মুখে করা সম্ভব হয়নি। এ ২ কি.মি. রিং বাঁধ দেয়া রয়েছে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, পূব সুন্দরবন বিভাগে সুপার সাইক্লোন আম্পান তান্ডবে বনের বেশ কিছু গাছপালা, কয়েকটি জেটি, ষ্টাফ ব্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক পুকুর ডুবে গেছে। ফলে খাবার পানির সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলায় ৮৫টি মেডিকেল টিমসহ ১১ হাজার ৭০৮ জন স্বেচ্ছাসেবক নিরলস কাজ করে চলেছে।

বাগেরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক রঘুনাথ কর বলেন, চলতি মৌসুমে বাগেরহাট জেলায় ৫২ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। চারটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার, ৯৭টি রিপার ও হ্যান্ড রিপার এবং স্থানীয় সেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় ইতিমধ্যে মাঠের ৮৫ ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছি। প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানার আগে মাঠে থাকা বাকি ১৫ ভাগ ধান কেটে ঘরে তুলতে চেষ্টা করেও পুরোপুরি সফল হওয়া যায়নি। ফলে ১৮৬ হেক্টর জমির
বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ১৩ হাজার ৭৯৭ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের বিজতলা, গ্রীষ্মকালীন ফসল, পাট, মরিচ পান ইত্যাদি দন্ডায়মান ফসল রয়েছে । এর মধ্যে ১ হাজার ৬৭৩ হেক্টর জমির দন্ডায়মান ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, সরকার বাগেরহাট জেলার জন্য ২শ মেট্রিক টন চাল, নগত ৩ লাখ টাকা, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্যে, গো-খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা ও ২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে। জেলার কোথাও কোন হতাহতের
খবর পাওয়া যায়নি। বেশ কিছু ফসল, মৎস্য ঘের, কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা বৈদ্যুতিক খুটি, বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে এর সঠিক পরিসংখ্যান এখনও হাতে এসে পৌছায়নি।