গৌরীপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল চুরি ঠেকাতে এবার গোলাপী কার্ড!

প্রকাশিত: ৮:৪৭ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২০

কমল সরকার’গৌরীপুর ; খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধিনে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর ১০টাকা কেজির চাল চুরি ঠেকাতে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এবার দেয়া হচ্ছে গোলাপী কার্ড। বৃহস্পতিবার (১৪ মে) আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের সুবিধাভোগীদের হাতে কার্ড প্রদান করেন ইউএনও সেঁজুতি ধর।

এ উদ্যোগের ভূয়শী প্রশংসা করেন গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম মিন্টু। তিনি বলেন, চাল চুরি ঠেকাতে প্রশাসনের এ উদ্যোগ সারাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। তালিকা দিবেন জনপ্রতিনিধি, কার্ড পৌঁছে দিবেন স্থানীয় প্রশাসন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বিপ্লব সরকার জানান, ১০টি ইউনিয়নের ২০হাজার ৮১৩জন কার্ডধারীকেই গোলাপী কার্ড প্রদান করা হবে। প্রত্যেক কার্ডধারী ৩০ কেজি করে এ উপজেলায় প্রতিমাসে ৬২৪.৩৯টন চাল বিতরণ করা হয়। যা বছরে ৩হাজার ১২১.৯৫ টন।

এ হিসাব অনুযায়ী প্রতিমাসে মইলাকান্দা ইউনিয়নে ২০২৮ জন পাবে ৬০.৮৪ টন চাল, গৌরীপুর ইউনিয়নে ১৯৪২ জন পাবে ৫৮.২৬ টন চাল, অচিন্তপুর ইউনিয়নে ২০৩৪ জন পাবে ৬১.০২ টন চাল, মাওহা ইউনিয়নে ১৯৪৭ জন পাবে ৫৮.৪১ টন চাল, সহনাটী ইউনিয়নে ২০৯৬ জন পাবে ৬২.৮৮ টন চাল, বোকাইনগর ইউনিয়নে ২২০৩ জন পাবে ৬৬.০৯ টন চাল, রামগোপালপুর ইউনিয়নে ২৩৮৮ জন পাবে ৭১.৬৪ টন চাল, ডৌহাখলা ইউনিয়নে ২২৪৫ জন পাবে ৬৭.৩৫ টন চাল, ভাংনামারী ইউনিয়নে ১৯০৯ জন পাবে ৫৭.২৭ টন চাল ও সিধলা ইউনিয়নে ১৯৫৬জন পাবে ৫৮.৬৮ টন চাল।

উপজেলা প্রশাসন ও কার্ডধারী এবং ডিলারদের সূত্রে জানা যায়, ইতোপূর্বে সবুজ রঙের কার্ডে চাল বিতরণ করা হতো। তালিকায় নাম থাকলেও বিভিন্ন ইউনিয়নে কার্ডধারীদের হাতে কার্ড ছিলো না। চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ডিলারদের যোগসাজশে এসব কার্ডের মাল কালোবাজারে বিক্রি করা হতো। অনেক এলাকায় ছিলো ভুয়াকার্ডধারী,এসব ঠেকাতে এবার সবুজ রঙের কার্ড বাতিল ঘোষণা করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধর। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বিপ্লব সরকার জানান, তদারকি কর্মকর্তার মাধ্যমে সরাসরি কার্ডধারীর হাতে গোলাপী রঙের কার্ড দেয়া হচ্ছে, যাদের হাতে সবুজ কার্ড নেই তারা ভোটার আইডি’র ফটোকপি জমা দিয়ে গোলাপী কার্ড নিয়ে যাচ্ছেন। কার্ডধারী ব্যতিত একজনকেও কার্ড দেয়া হবে না।

এদিকে গৌরীপুর থানা সূত্রে জানা যায়, চাল চুরির ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ৪ জন। গত ২০এপ্রিল গভীররাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাওহা ইউনিয়নের ভূটিয়ারকোনা বাজারের চাল ব্যবসায়ী ফজলু মুনশীর দোকান থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ৬৭ বস্তায় ৩হাজার ৩৫০ কেজি চাল উদ্ধার করেছে। একই দিনে চাল ব্যবসায়ী আজাহারুল ইসলামের ঘর থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১হাজার ২৫০ কেজি চাল উদ্ধার ও চাল ব্যবসায়ী আজাহারুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এছাড়াও কালোবাজারে চাল বিক্রির অভিযোগে বোকাইনগর ইউনিয়নের ডিলার মোঃ মাহবুবুর রহমান শাহিন, কালিবাড়ীর লুটন রাজবরের পুত্র মহেষ রাজবর, একই গ্রামের রিয়াজ উদ্দিনের পুত্র রফিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পৃথক ঘটনায় ৩টি মামলা দায়ের করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব সরকার। এছাড়াও ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নে কার্ডধারীরা চাল বঞ্চিত হওয়ার ঘটনায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডিলার রুকনুজ্জামান পল্লবের ডিলারশীপ বাতিল করেছে উপজেলা প্রশাসন।

অপরদিকে চাল বঞ্চিত কার্ডধারীরা উপজেলার মাওহা ইউনিয়ন ও অচিন্তপুর ইউনিয়নের চালের চুরি বিচারের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবরে ২৭এপ্রিল ৩টি আবেদন জমা দেন। এ ঘটনায় উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার নন্দন কুমার দেবনাথকে প্রধান ও উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার মোহাম্মদ উল্লাহ পারভেজ, উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল মান্নানকে সদস্য করে ওই দিনেই ৩সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন উপজেলা প্রশাসন।

কমিটির প্রধান নন্দন কুমার দেবনাথ এ প্রতিনিধিকে জানান, শুক্রবার জানান অচিন্তপুর ইউনিয়নের তদন্ত প্রতিবেদক ১১ মে প্রতিবেদন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। মাওহা ইউনিয়নের তদন্ত কার্যক্রম চলছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেঁজুতি ধর জানান, গোলাপী কার্ড সরাসরি কার্ডধারীদের হাতে দেয়া হচ্ছে। গোলাপী কার্ড ছাড়া কেউ চাল তুলতে পারবে না,এবার শুধুমাত্র কার্ডধারীরাই সরাসরি চাল তুলতে পারবেন। খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বিপ্লব সরকার জানান, ইতোমধ্যে সহনাটী ও অচিন্তপুর ইউনিয়ন কার্ডবিতরণ ৯০ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সব ইউনিয়নে গোলাপী কার্ড দেয়া হবে।